নষ্ট মোবাইল ফোনও হতে পারে ভয়াবহ রূপ

ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার পাশাপাশি ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করছে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া ইলেক্ট্রনিক পণ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, ই-বর্জে্যর ভয়াবহতা এখনই ঠেকানো না গেলে অচিরেই সবুজ পৃথিবী পরিণত হবে। নষ্ট ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিশাল ভাগাড়ে।
ই-বর্জ্যের ভয়াবহতা নিয়ে হলিউডের অ্যানিমেশন মুভি ‘ওয়াল-ই’। এতে দেখানো হয়, নষ্ট হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক পণ্যের বিষে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে সবুজ। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় পৃথিবীবাসীকে তাই আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্য গ্রহে।
বিশ্বে যে হারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে সিনেমার এই গল্প বাস্তবে রূপ নিতে পারে ভবিষ্যত পৃথিবীর কোনও এক সময়ে।
জাতিসংঘের এক গবেষণা বলছে, কেবল গত বছরই বিশ্বে ই-বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে ১১ কোটি টন। যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। আর, গত ১০ বছরে বিশ্বে ই-বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়েছে ৫০০ গুণ। সঙ্গে বেড়েছে ঝুঁকি। আর বাংলাদেশে সৃষ্ট ই-বর্জে্যর পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে প্রায়, ২৫ লাখ টনে।
বুয়েটের অধ্যাপক ও ই-বর্জ্য গবেষক ইয়াসির আরাফাত বলছেন, প্রতি বছর যে হারে ই-বর্জ্য বাড়ছে, তার প্রতিক্রিয়া এক সময় দেখা দেবে। তখন প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার নেতিবাচক ফলাফল ভোগ করবে। আমরা হয়তো এখন বুঝতে পারছি না, কিন্তু অচিরেই এর ভয়াবহতা টের পাবে বাংলাদেশ।
তাই ই-বর্জে্যর ভয়াবহতা এখনই রোধ করা না গেলে অচিরেই দিতে হবে কঠিন মূল্য।
ই-বর্জ্য বিষয়ে গবেষক শাহরিয়ার হোসেন বলেন, আমার ঘরের কোণে যে মোবাইল অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে, সেটাও কিন্তু ভয়াবহ। কারণ তা যেকোনও সময় আগুনের সংস্পর্শে বিস্ফোরণ হতে পারে। এরফলে মোবাইল পুড়ে যেতে পারে। তখন এ থেকে যে গ্যাসটা উৎপাদিত হবে, তা কিন্তু মানবদেহে ক্ষতির কারণ হতে পারে। অর্থাৎ ব্যবহারের শুরু থেকে ফেলে দেয়া পর্যন্ত এর কিন্তু ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে।
রিসাইকেলের মাধ্যমে এ ধরণের বর্জ্যরে ভয়াবহতা থেকে বাঁচার উপায় আছে। তবে এজন্য সবার আগে দরকার সচেতনতা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবহান বলেন, রিসাইকেলের মাধ্যমে ই-বর্জ্যের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। যাদের কাছ থেকে পণ্যটি কেনা হচ্ছে, তারা যদি ব্যবহারের পর পণ্যটি স্বল্পমূ্ল্যে ফেরত নিয়ে রিসাইক্লিং করে তবে একদিকে পরিবেশ বাঁচে, অন্যদিকে সম্পদের পুনঃব্যবহার হয়।
পাশাপাশি যাচাই-বাছাই শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ‘ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা’ সংসদে পাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *