শ্বব্যাপী মোবাইল ফোনে ম্যালওয়্যারের আক্রমণ বাড়ছে। গত ছয় মাসে মোবাইল ফোনে জিরো-ডে ম্যালওয়্যারের আক্রমণ বেড়েছে ৯২ শতাংশ। মোবাইল সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি প্রাডেও ল্যাব প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর টেলিকম এশিয়া।
মোবাইল ফোনে জিরো-ডে ম্যালওয়্যারের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এটা স্পষ্ট, হ্যাকাররা এখন এন্টারপ্রাইজ গ্রাহকদের লক্ষ্য করে তত্পরতা বাড়াচ্ছে এবং ডিভাইসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙতে তারা প্রতিনিয়ত নতুন পন্থা অবলম্বন করছে।
অধিকাংশ ভাইরাস ডাটাবেসে যে ম্যালওয়্যার অজ্ঞাত থাকে, তাকে জিরো-ডে ম্যালওয়্যার বলা হয়। রিয়েল-টাইম বিহেভিওরাল সলিউশন বিশ্লেষণের মাধ্যমে শুধু এ ধরনের ম্যালওয়্যার শনাক্ত করা সম্ভব। কারণ স্ট্যান্ডার্ড মোবাইল সিকিউরিটি সলিউশন ভাইরাস ডাটাবেসের ওপর নির্ভর করে।
প্রাডেও ল্যাবের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হ্যাকাররা তিন উপায়ে মোবাইল ফোনের তথ্যে প্রবেশাধিকার পায়। এসব হলো— অ্যাপ্লিকেশন (ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার, অ্যাডওয়্যার), নেটওয়ার্ক (ফিশিং, ম্যান-ইন-দ্য মিডল) এবং ডিভাইস (অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতা)। গত দুই বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ ডিভাইসের বাইরে তথ্য পাঠায়। মোবাইল ম্যালওয়্যার সংখ্যায় কম হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মোবাইল ম্যালওয়্যার সংক্রমণে ক্ষতি বেশি হয়। গত ছয় মাসে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়ানোর সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু ডিভাইসের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়ানো শতভাগ বেড়েছে। মোটকথা, হ্যাকিংয়ের হুমকির কারণ ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে।
স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এসব অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। মোবাইল অ্যাপগুলো সংবেদনশীল তথ্য বেশি পরিচালনা করে। এসব অ্যাপের অনেকগুলো গোপনে তাদের ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য দূরবর্তী সার্ভারে স্থানান্তর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহক তথ্য বেহাত কিংবা চুরির ঘটনায় বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অ্যাপ কর্তৃপক্ষ ও ডিভাইস নির্মাতাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
প্রাডেও ল্যাব জানিয়েছে, মোবাইল গ্রাহকের সবচেয়ে বেশি ফাঁস হওয়া তথ্য হচ্ছে— তাদের অবস্থান, কন্টাক্ট লিস্ট, এসএমএস, প্রোফাইল ও ফাইল (ছবি, ভিডিও ও ডকুমেন্ট)।
বেশ কয়েকটি পরিচিত নেটওয়ার্ক ব্যবহারে হুমকির বিষয়টি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাজারে অনিরাপদ ওয়াই-ফাইয়ের আধিক্য থাকায় ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে মোবাইল ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমে দুর্বলতা থাকায় গ্রাহক তথ্য চুরি থামছেই না। অপারেটিং সিস্টেমের নতুন সংস্করণ পাওয়া গেলেও অধিকাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী তা হালনাগাদ করে না। এর ফলে তাদের ডিভাইস সাইবার হামলার ঝুঁকিতে থাকছে।
মোবাইল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান লুকআউট সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করা হচ্ছে। মোবাইল ফোন ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঘটনার শিকার বেশি হচ্ছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা ভিন্নমতাবলম্বীরা। এসব ঘটনায় মদদ দেয় সংশ্লিষ্ট দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এর মাধ্যমে সরকার বিরোধী পক্ষের সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করে। এসব হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সমর্থন থাকায় ডিভাইসের সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছেন হ্যাকাররা। ফোন ব্যবহারকারীর কন্টাক্ট নম্বরগুলো, তার সঙ্গে অন্যদের যোগাযোগ, ভ্রমণের ইতিহাস, এমনকি আর্থিক লেনদেনের তথ্যেও নজরদারির সুযোগ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের লক্ষ্যে ২২টি ম্যালওয়্যার আক্রমণ শনাক্ত করেছে তারা। এসব ঘটনায় সমর্থন ছিল সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের। ২০১৫ সালজুড়ে এমন ঘটনার সংখ্যা ছিল মাত্র দুটি।
বিশ্লেষকদের মতে, আগে হ্যাকিংয়ের লক্ষ্য ছিল পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি)। বর্তমানে হ্যাকারদের লক্ষ্য হচ্ছে মোবাইল ফোন। স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোনগুলোয় হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বেশি।