ডেমরায় দম্পতি খুন ৮ দিনেও পাঁচ নারীর হদিস পায়নি পুলিশ

‘ডেমরার বৃদ্ধ দম্পতিকে অজ্ঞান করে হত্যা ঘটনায় কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ। ৮ দিন পার হয়ে গেলেও বাসায় প্রবেশকারী সেই ৫ নারীকে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। একতলা বাড়ির আশপাশ থেকে জব্দকৃত সিসি ক্যামেরার ২০টি ভিডিও ফুটেজ ধরে ঘাতকদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, বাসা থেকে কোনো মালামাল লুট করা হয়নি। আলমারিতে থাকা ৩০ হাজার টাকা থাকলেও তা নেয়া হয়নি। এরপরই কেন আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রী সাহেরা খাতুনকে হত্যা করা হলো তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা রহস্যের। বাসায় প্রবেশকারী ৫ নারীর মধ্যে নিহতদের কোনো আত্মীয়স্বজন ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

গত ২৬শে আগস্ট সন্ধ্যায় ডেমরার বক্সনগরে একটি পুরনো একতলা বাড়িতে আব্দুস সাত্তার (৭০) ও সাহেরা খাতুন (৬০) দম্পতিকে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন প্রতিবেশীরা।পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের নাক ও মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। চিকিৎসকদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা তাদের খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

সূত্র জানায়, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা নম্বর-৮। মামলায় ৫ অজ্ঞাতনামা নারীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডেমরা থানার এসআই মো. তৌহিদুর রহমান জানান, ‘দম্পতি খুনের ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমরা বিভিন্ন ক্লু ধরে সামনের দিকে এগোচ্ছি। দ্রুত এই ঘটনার নাটের গুরুদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

গতকাল সকালে ডেমরার পূর্ব বক্সনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বক্সনগরের বড় মসজিদের একটু সামনের দিকে একটি পুরোনো একতলা বাড়ি। এলাকাবাসী ইমাম সাত্তারের বাড়ি বলে চেনেন। নিহত আব্দুস সাত্তার বাংলাদেশ ব্যাংক মসজিদের সহকারী ইমাম হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। ওই পুরনো একতলায় ছেলে ও ছেলের বৌকে নিয়ে থাকতেন নিহত দম্পতি। নিহতদের পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে গেছেন বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

বাসার ছয়টি কক্ষের মধ্যে তিনটি কক্ষে তারা থাকতেন। বাকি তিনটি কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়। এর একটি ঘরের ভাড়া দিতেই টু-লেট টাঙানো হয়েছিল।

গত শনিবার ওই ঘরটি ভাড়া নিতে পাঁচজন নারী বাড়িতে এসেছিল। অনেকক্ষণ খোসগল্প করছিল। এরপর তারা ওই দম্পতিকে খাবারের সঙ্গে কিছু খাইয়ে নির্বিঘ্নে বের হয়ে যায়। বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী না থাকার কারণে তারা কোনো বাধা ছাড়াই সেখান থেকে চলে যায়। স্থানীয় মুদি দোকানি আহমেদুল আশিক জানান, নিহত আব্দুস সাত্তার এলাকায় অনেকদিন ধরে বসবাস করেন। এলাকার লোকজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। কারও সঙ্গে তেমন বিরোধ ছিল না। পাশের বাড়ির কাজের ভুয়া সাকিনা খাতুন জানান, তারা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাদের নিহতের ঘটনায় এলাকাবাসী মর্মাহত।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডেমরা থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ শে আগস্ট বিকালে ওই বাড়িতে ৫ নারী এসেছিল। তারা বাসা ভাড়ার নাম করে সেখানে প্রবেশ করেছিল। ওই দম্পতি পাঁচ নারীর সঙ্গে খোসগল্পে মেতে উঠেন। একপর্যায়ে তারা দম্পতির মাথায় মেহেদি দিয়ে দেয়। এ ছাড়াও তারা দম্পতিকে কয়েকটি বিস্কুট খাওয়ায়। এতে তারা অচেতন হয়ে পড়লে তারা সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, বাড়ি থেকে কোনো কিছু খোয়া যায়নি। কোনো লুটও হয়নি। তাহলে কারা এই কাজ করেছে তা তদন্তকারীদের নানা ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে। সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে প্রায় ২০টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ফুটেজগুলো বাড়ি থেকে দূরে হওয়ার কারণে খুনিদের চিহ্নিত করা যায়নি। এছাড়াও পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার এজাহারে যে ৫ জন নারীকে একসঙ্গে বাড়ির মধ্যে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে তা ফুটেজে একসঙ্গে ৫ নারীর ঘোরাফেরা ও হাঁটাচলা করতে দেখা যায়নি। পুলিশ বলছে, ফুটেজে কিছু নারীর গতিবিধি সন্দেহজনক দেখা গেছে। তাদের চিহ্নিতের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ওই ৫ নারীর মধ্যে দম্পতির কোনো স্বজন ছিল না তা তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। কারণ খুনিরা বাড়িতে প্রবেশ করে দম্পতির মাথায় মেহেদি লাগিয়েছিল। পরিচিত মহিলা না হলে কেউ হঠাৎ করে মাথায় মেহেদি লাগাতে দিবে না। এজন্য পুলিশ মামলার ক্লু উদঘাটনের স্বার্থে নিহতদের প্রতিবেশী ও স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনার সময় ওই ৫ নারীকে রক্ষার জন্য কোনো যুবক বাইরে থেকে রেকি করেছিল কি-না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *