সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শুধু চালক নয়, সংশ্লিষ্টদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কেবল চালক নয়, মালিক, পথচারী ও সরকারি সংস্থাগুলোও দায়ী। অথচ নতুন সড়ক পরিবহন আইনে, চালকের বাইরে অন্য কাউকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করার বিধান রাখা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার সব দায় চালককে দিয়ে আইন করা হলে, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পর, দুর্ঘটনারোধে ‘সড়ক পরিবহন আইন’ সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এখন তা জাতীয় সংসদে পাশের অপেক্ষায়। আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অবহেলার জন্য দুর্ঘটনা ঘটলে, চালককে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু চালকরা বলছেন, দুর্ঘটনার দায় কেবল তাদের একার নয়।
আব্দুর রহিম নামে এক গাড়িচালক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মালিককে বললাম আমার ব্রেকটা খারাপ ঠিক করে দেন। তখন তারা বলে যান, একটা ট্রিপ মেরে আসেন। কিন্তু পথে দুর্ঘটনা ঘটলে একটা ট্রিপ মারারও হয়তো সৌভাগ্য হয় না। এখানে উচিত মালিক ও চালককে সচেতন হতে হবে।
বাস চালক মহসীন হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সব দোষ গাড়িচালকদের ওপর দিলে হবে না। বাস স্টপেজ নাই। অনেক সময় দেখা যায় রাস্তায় হঠাৎ কাটা ছেড়া হয়, গর্ত থাকে। সেসময় গাড়িচালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তখন দুর্ঘটনা ঘটে।

মাহবুব হোসেন নামে আরেক গাড়িচালক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সব জায়গায় দোষ গাড়িচালকের। ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলবে না ভালো কথা। টাকা খেয়ে আবার ফিটনেস ছাড়া গাড়ি ছাড়তে দেয়া হয়। তাহলে দোষ কার? তারাই অঘটনের মূল শত্রু।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নতুন আইনে, সড়কে নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সব বিষয় রাখা হয়নি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি না চলতে দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির(বিআরটিএ)। ফিটনেস করে নেয়ার দায়িত্ব মালিকের। ফিটনেস না থাকার কারণে কোনও গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটলো। সে ক্ষেত্রে আপনি কাকে জেলে ঢুকাবেন, কাকে শাস্তি দেবেন। বিআরটিকে তা হলে ক্রিমিনাল পানিশমেন্ট এর আওতায় আনা উচিত। মালিককে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামছুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, দায় কিন্তু অনেকের আছে। তারা কেউ কোনদিন আইনের আওতায় আসছে না। যে কারণে তাদের সংশোধন হচ্ছে না। তাদের দায়ও নিতে হচ্ছে না। যতদিন যারা সড়ক ব্যবস্থা অনিয়মের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের বিচার হবে না, ততদিন দুর্ঘটনা বাড়তেই হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা তদন্তে, পেশাদার ও নিরপেক্ষ সংস্থার বিধান যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *