শাহীন চৌধুরী : বাসা বাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় ক্রমেই বাড়ছে এলপিজি’র চাহিদা। এই চাহিদা মেটাতে জ্বালানি বিভাগ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে দেশে এলপিজির মোট চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সরবরাহ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৭ লাখ মেট্রিক টন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এলপিজি হবে রান্নাঘরের প্রধান জ্বালানি। ফলে এখন থেকেই এলপিজির দাম সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তবে এক্ষেত্রে উদ্যোগের যথেষ্ট অভাবের কথাও স্বীকার করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এলপিজি’র চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (ইনোক) যৌথ অংশীদারিত্বে একটি স্থায়ী তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে এলপিজির দাম কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে বিপিসি সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমরা ইনোক-এর প্রস্তাব পেয়েছি। আমরাও এলপিজি টার্মিনাল করতে আগ্রহী। এতে দেশে এলপিজির পরিবহন খরচ প্রতি টনে ৭০ ডলার কমে আসবে। এতে বোতল প্রতি দাম কমতে পারে ১০ ভাগ হারে। অর্থাৎ এখন যে দামে গ্রাহক এলপিজি কিনছে তার থেকে ১০ ভাগ কমে তারা এলপিজি পাবে।
এ বিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের সুবিধাজনক জায়গায় এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দেন ইনোক’র নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান অলিভার স্টিন। তিনি জানান, তাদের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়দি এলপিজি সরবরাহ পাবে বাংলাদেশ। তারা বিপিসির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে আগ্রহী।
বিষেজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে রান্নার জ্বালানির পুরোটাই মেটাতে হবে এলপিজি দিয়ে। কারণ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে আসবে। এর বিপরীতে রান্নার জন্য দামী এলএনজি সরবরাহ করা কঠিন হবে। তখন চাইলেও রান্নার জন্য গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। ফলে এখন থেকেই এর প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
এলপিজি টার্মিনালের সুবিধা সম্পর্কে বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, টার্মিনাল করা গেলে বড় আকারের জাহাজ বাংলাদেশে আনা সম্ভব। যেসব জাহাজ একবারে ৭০ হাজার টন পর্যন্ত এলপিজি পরিবহন করতে পারে। আর এখন সাধারণত ৫ হাজার টনের জাহাজে করে এলপিজি পরিবহন করা হয়। এতে দাম বেশি পড়ে। অনেক দিন থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিবহন খরচ কমাতে হবে। সেক্ষেত্রে স্থায়ী বা ভাসমান এলপিজি টার্মিনাল তৈরি করা জরুরী।
এরআগে এলপিজি নানাভাবে দেশে আমদানি করা হলেও প্রথমবারের মতো এটিই হবে এলপিজি টার্মিনাল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টার্মিনালে সাগরের মধ্য থেকে পাইপলাইনে করে এলপিজি নির্ধারিত ট্যাংকে সরবরাহ করা হবে। এরপর সেখান থেকে দেশের অন্য জায়গায় বড় ট্যাংকারে করে পৌঁছে দেওয়া হবে। মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় এ ধরনের টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সাগরের পর্যাপ্ত গভীরতাও রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সূত্রমতে, আবাসিক ছাড়াও দেশে এলপিজির নানামুখী ব্যবহার ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশে অটো গ্যাসও চালু হয়েছে। যা মূলত পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এলপিজি টার্মিনাল হলে পেট্রোল ও সিএনজির চেয়েও অটোগ্যাস কম দামে পাওয়া যেতে পারে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান