সারোয়ার জাহান : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই বোঝা যাবে সরকার কতটা প্রস্তুত, কোন কোন ইস্যুতে তাদের দ্বিধা আছে।তবে তারা (সরকার) সংবিধানের বিষয়গুলোকে তুলতে চাইবেন, কিন্তু এই সংবিধানকে তো তারাই সংশোধন করেছেন, সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যাপারগুলো যোগ করেছেন।সংবিধান এবং আইন পরিবর্তন তো কোনা ব্যাপারই না, এক মিনিটেই তা হতে পারে।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন ড. কামাল হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে সংলাপের আমন্ত্রণের চিঠি পাওয়ার পর, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বিবিসিকে বলেন, তিনি শেখ হাসিনাকে বলবেন, তারা খোলা মন নিয়ে কথা বলতে এসেছেন, কোনো দলীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নয়। আমি বলবো জাতীয় স্বার্থে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমরা যেমন চাই, আপনিও চান…আমরা উভয়েই সেটাই চাই, তাহলে কেন উপায় বের করা যাবে না।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে রাজনৈতিক সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে যে চিঠি হাসিনা ড. কামাল হোসেনকে পাঠিয়েছেন, তাতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের মৌলিক অবস্থানের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রীর তার চিঠিতে লিখেছেন, ‘সংবিধান সম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য তার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত-দফা দাবি নিয়ে সরকারের নেতা-মন্ত্রীরাও গত বেশ কিছুদিন ধরে ক্রমাগত বলেছেন, এসব দাবির অনেকগুলোই মানার প্রশ্নই ওঠে না, কারণ বর্তমান সংবিধানে এরকম কিছুর কোন সুযোগ নেই।
ঐক্যফ্রন্টের প্রধান যে দাবি – সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন – সেটিকে এ যুক্তিতেই দিনের পর দিন সরকারের পক্ষ থেকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংলাপে কি কৌশল হবে ঐক্যফ্রন্টের?
এখন তার চিঠিতে ‘সংবিধান-সম্মত’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি তাহলে তাদের সেই অবস্থানেই অনড় থাকার বার্তা দিয়ে দিলেন?
এই প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই বোঝা যাবে সরকার কতটা করার জন্য প্রস্তুত, কোন কোন ইস্যুতে তাদের দ্বিধা আছে।
তবে একই সাথে তিনি, ‘কিছুটা তো বুঝতে পারছি তারা সংবিধানের বিষয়গুলোকে তুলতে চাইবেন, কিন্তু এই সংবিধানকে তো তারাই সংশোধন করেছেন, সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যাপারগুলো যোগ করেছেন।’
‘আমরা তদের বলবো, এটা তো সংবিধান নয়, এটা তো সংশোধনী… অবশ্যই নির্বাচন সংবিধান সম্মত হবে, অসাংবিধানিকভাবে তো নির্বাচন করা যায়না, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে সংশোধনী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’
‘লক্ষ্য তো একটা যে সবার অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সংবিধান এবং আইন পরিবর্তন তো কোনা ব্যাপারই না, এক মিনিটেই তা হতে পারে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার যে দাবি তারা দিয়েছেন, সেটা একবারেই নতুন কিছু নয়।
‘২০০৭ সালে শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলে ছিলেন, সেই একই কথা বলে ২০০৮ এর নির্বাচন হয়েছে।’
তবে সংলাপে তাদের সুনির্দিষ্ট কৌশল নিয়ে বেশি কথা বলতে রাজী হননি ড. হোসেন।
‘কালকে যেহেতু আলোচনা, সুতরাং বেশি কিছু বলতে চাই না। আমরা আশা করবো সরকার আমাদের সাত দফা দাবি মেনে নিক।’
সরকার কেন আপোষ করবে?
কিন্তু সরকার যে নমনীয় হবে সেটা তারা আশা করছেন কীভাবে? সরকারের ওপর তো চাপ নেই?
বিবিসির এই প্রশ্নে ড. হোসেন বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য অবশ্যই সরকার চাপে রয়েছে।
‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাটাই চাপ। তারা জানেন যে নির্বাচনে মানুষ অংশগ্রহণ করেনা, সেই নির্বাচন থেকে কিছু পাওয়া যায়না। এই উপলব্ধি নিশ্চয়ই তাদের হয়েছে। তা না হলে তো আমাদের আলোচনায় ডাকার কোনো দরকার তো তাদের ছিলনা।’
সংলাপে তারা নিজেরা কতটা নমনীয় হবেন?
‘আমি আগে থেকে কোনো অনুমান করতে চাইনা। লক্ষ্য একটাই সবাই একটা নির্বাচন। আমরা উভয়েই সেটাই চাই।’