মায়ের মুঠো থেকে হাত ছাড়িয়ে ভোঁ দৌড়। মা পিছে পিছে ছুটছেন। দশ বছরের উৎসব ভ্রুক্ষেপ করছে না। দৌড়োচ্ছে আর চিৎকার করছে, ‘কী সুন্দর পার্ক, কত রাইডস। আগে আনোনি কেন?’
গতকাল সোমবার বিকেলে উৎসবকে নিয়ে বুড়িগঙ্গার পাড়ের ইকোপার্কে বেড়াতে এসেছিলেন তার মা–বাবা। ছেলের মতো মা–বাবাও অবাক ভেতরের দৃশ্য দেখে। এখানে এমন একটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তা অনেকেই জানেন না। নদীর পাড়ের দখল হয়ে যাওয়া জায়গা উদ্ধার করে বিআইডব্লিউটিএ নয়নাভিরাম ও সবুজ গাছগাছালিতে ভরা ইকোপার্কটি গড়ে তুলেছে। এই বিনোদনকেন্দ্রটি এখন লাভজনকও হয়ে উঠেছে। তবে এখন ভেতর ঢোকার টিকিট আর রাইডগুলোর টিকিটের দাম বেড়েছে। আগে ভেতরে ঢোকার টিকিট ছিল ৫ টাকা, এখন হয়েছে ৩০ টাকা। রাইডগুলোর টিকিটের দাম প্রতিটি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, ১০ বছর আগে এখানে বুড়িগঙ্গার প্রায় ছয় একর জায়গা দখল করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইট–বালুর অবৈধ ব্যবসা করতেন। তাঁরা ২০১০ সালে সে জায়গা উদ্ধার করে। পুনরায় দখল ঠেকাতে ২০১২ সালের শেষ দিকে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে গাছপালা লাগিয়ে তৈরি করা হয় ইকোপার্ক। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইকোপার্কটির অবস্থা একেবারেই বেহাল হয়ে পড়ে। বখাটে আর মাদকাসক্তদের আড্ডায় পরিণত হয়। দর্শনার্থীর সংখ্যাও খুব কমে যায়। এ অবস্থায় ইকোপার্কটির ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়। গত বছর ইজারা দেওয়া হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। নেপচুন এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট নামের এ প্রতিষ্ঠান পার্কটিকে একেবারে পাল্টে দিয়েছে। বসিয়েছে ২৪টি চমৎকার রাইড। এ ছাড়া আছে থ্রিডি সিনেমা, ফুডকোর্টসহ অন্যান্য ব্যবস্থা।
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পার্কে গিয়ে দেখা গেল, দর্শনার্থী তখনো খুব বেশি আসেনি। বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। এসেছে মা–বাবার সঙ্গে। স্কুল ছুটি, ওয়ারী থেকে মা আর মামার সঙ্গে এসেছে তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া আমীর। তার চোখেমুখে আনন্দের ছটা। জোরেশোরেই বলছিল, ‘মামা, ঢাকা শিশুপার্কেও এত রাইডস নেই! গেন্ডারিয়া থানা থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে এই ইকোপার্ক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালেন, এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ দর্শনার্থী আসে। ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা হাজার পেরিয়ে যায়। সপ্তাহের সাত দিনই সকাল আট থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে।
গতকাল দেখা গেল, পার্কে আসা বেশির ভাগ শিশুরই মেরিগো রাউন্ড রাইডটি প্রিয়। এ ছাড়া এখানে আছে সেলফ কন্ট্রোল প্লেন, বোটারি কার, রকিং রেট, ক্যাম্পিং প্যাড, কয়েন অপারেটেড বেবি ফিগার, ওয়ান্ডার হুইলসহ বিভিন্ন রাইড। অনেকে আবার নদী দেখতেও ভিড় করছে। পার্কের দক্ষিণে বড় ঘাট। সেখান থেকে নদী দেখা যায়। পার্কের ভেতরে হেঁটে বেড়ানোর জন্য চওড়া পথ। এর পাশ দিয়ে ঝাউ, দেবদারু, কড়ইসহ দেশীয় নানা প্রজাতির গাছের সারি। বসার জন্য চারপাশে রয়েছে ছাউনি দেওয়া বেঞ্চ। সব মিলিয়েই এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
ইকোপার্কের ইজারাদার নেপচুন এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড অ্যামিউজমেন্টের ব্যবস্থাপক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ইকোপার্ক এখন লাভজনক। তাঁরা পাঁচ বছরের ইজারা পেয়েছেন। প্রতিবছর ৩৩ লাখ টাকা দিতে হয় বিআইডব্লিউটিএকে। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর) এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, নদীকেন্দ্রিক বলে এই ইকোপার্কের প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে তুরাগপাড়েও এ ধরনের আরও তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
A.H Alen