দলীয় মনোনয়ন পেতে চার হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। জোট মহাজোটের সমীকরণে ২৪০ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আবেদনকারীদের মধ্যে যারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না তাদের কড়া বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। সাক্ষাৎকারের জন্য গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকা হলেও সংখ্যায় বেশি হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন মাধ্যমে করা জরিপের ফলের ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আজ দলের মনোনয়ন বোর্ডের দ্বিতীয় বৈঠক হবে।আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। সকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও সংখ্যায় বেশি হওয়ায় তা গণভবনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার রশিদ দেখিয়ে গণভবনে প্রবেশ করেন। অধিক সংখ্যক দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি হওয়ায় দলের আর্থিক সুবিধা হলেও তা দলের নেতৃত্বের নেতিবাচক লক্ষণ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কোনো এলাকায় অধিক সংখ্যক প্রার্থী হওয়ার মানে হলো ওই এলাকার নেতৃত্বে সমস্যা আছে। এখানে নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, যারা বিদ্রোহী হবে তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত। যদি গ্রুপিংয়ের কারণে আমাদের ভোট নষ্ট হয় আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে আপনারা আমাকে আর দলে পাবেন না। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎ পর্ব শেষ হয়। সাক্ষাৎ পর্বে কারও সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ হয়নি বলে জানান মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪ হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রিতে বিস্ময় প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে দলীয় ফান্ড সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে সারা দেশে দল যে নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে তা এর মাধ্যমে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, যেসব আসনে মনোনয়নপত্র বেশি কেনা হয়েছে সেখানে নেতৃত্ব শূন্যতা রয়েছে, সেখানে যত বড় নেতাই হোক না কেন, তারা দলকে সংগঠিত করতে পারেননি। এটা তাদের নেতৃত্ব শূন্যতার প্রমাণ। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ক্ষমতায় এলে অনেক পদ ক্রিয়েট করা হবে, সেখানে সবাইকে সংযুক্ত করা হবে। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী
বলেন, যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তাকেই মেনে নিতে হবে বলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি যাকেই মনোনয়ন দেব, তাকেই আপনাদের মেনে নিতে হবে। আপনারা কথা দিলেন?’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কথায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই সম্মতি দেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবার সম্পর্কে জানি। আপনাদের সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কারা কি করেছেন, কারা কোন দল থেকে এসেছেন আমি সব জানি। বেশি লাফালাফি করার দরকার নেই। কোনো গ্রুপিং করারও দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জরিপে যারা এগিয়ে থাকবে তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে। সেখানে ছোট নেতা, বড় নেতা দেখা হবে না। যাকে মনোনয়ন দেব তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নইলে বিপদ হবে। ক্ষমতায় আসছি মনে করে নিজেদের মধ্যে যে মনোনয়ন পাওয়ার তা পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রার্থিতা বিরোধিতা ও প্রার্থীর বিপক্ষে বিরোধিতা করা হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। একটা সিটও হারাবো কারো এমন মনোভাব পোষণ করা যাবে না। এ সময় তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন খুব কঠিন নির্বাচন হবে।
খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এই সময় সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করেন, তাহলে আগের মতো বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সবার দায়িত্ব নিতে পারবো না। এবার নেত্রীকে বেটে খাওয়ালেও কাজ হবে না। আমরা আগামী নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি না। আমরা কাজ করছি আগামী প্রজন্ম নিয়ে। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো আসনে একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব আসনে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। আপনারা যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করুন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, একেকটি আসনে অনেকগুলো মনোনয়ন ফরম তোলায় উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ ধরনের অবস্থা ভালো নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলের যারা ইতিমধ্যে নির্বাচিত হয়ে আছেন তাদেরকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে না। তিনি বলেন, গত দুই নির্বাচনে ক্ষমতায় এনেছি, এবারো আমিই ক্ষমতায় আনবো- এটা মনে করে কোনো লাভ নেই। প্রার্থীর নিজ নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকতে হবে।
জনসম্পৃক্ত হতে হবে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে, কর্মী আছে, ভোট আছে। ১৯৮১ সালে নেতৃত্বে এসে দলকে সংগঠিত করেছি। তিলে তিলে এই দলকে গড়ে তুলেছি। আমি, রেহানা, জয়, পুতুলসহ আমার পরিবারের সদস্যরা অনেক অসহায় সময় পার করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগকে দমাতে পারেনি। এখনও নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। সাক্ষাৎকারের শুরুতে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক আসনে অনেক মনোনয়ন ফরম কেনায় তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল। এ লক্ষণ ভালো নয়। মেহেরপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরহাদ হোসেন
বলেন, মনোনয়ন নিয়ে আমরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনোনয়ন চূড়ান্ত করে দেয়া উচিত। যিনি মনোনয়ন পাবেন তাকে তো এলাকায় কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা আজ এদিকে আজ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩টায় দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, এ বৈঠকে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদীয় বোর্ডের সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সারা দেশে তিন শ’ আসনের বিপরীতে এবার নৌকা পেতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ৪ হাজার ২৩ জন। এর মধ্যে বরগুনা-১ আসনে সর্বাধিক ৫২টি মনোনয়ন ফরম কেনা হয়। প্রতিটি ফরম বিক্রি করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়। এতে দলের ফান্ডে জমা পড়েছে ১২ কোটি ৭ লাখ টাকা। এত মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে কাকে রেখে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা নিয়ে চাপে দলীয় হাইকমান্ড।