প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যবসায়ীদের জন্য আমার দরোজা সব সময় খোলা। যদি কোনোরকম সহযোগিতা লাগে, অবশ্যই সরকার হিসেবে আমরা করবো। তিনি বলেন, যদিও সময় এখন সীমিত। আগামী ইলেকশনে কী হবে তা বলতে পারি না। তবে যতক্ষণ আছি ততক্ষণে যা যা প্রয়োজন সেটা করে দিতে পারবো, সেইটুকু কথা দিতে পারি। এ ছাড়া আমরা যে একটা সিস্টেম করে রেখেছি, এরপর যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন কেউ দেশের উন্নয়নে বাধা দিতে পারবে না। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে আর কেউ থামাতে পারবে না। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহীউদ্দিনসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য ও খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের জন্য ৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি’ প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেশ-বিদেশে ঘোরেন, আপনারাও খুঁজে বের করুন কোন দেশে আমাদের দেশের কোন কোন পণ্য রপ্তানি করা যায়। এ ছাড়া বাজারকে খুঁজে নেয়া এবং পণ্যটাকে তৈরি করা, সেটাও কিন্তু আপনাদের একটা দায়িত্ব। সেই ক্ষেত্রে যদি কোনো রকম সহযোগিতা লাগে, অবশ্যই সরকার হিসেবে আমরা তা করবো। রপ্তানিখাতে গতিশীলতা আনয়ন ও রপ্তানি বাণিজ্যে আমাদের শিল্পকে প্রতিযোগিতা-সক্ষম করার লক্ষ্যে আমরা রপ্তানি নীতি ২০১৮-২০২১ প্রণয়ন করেছি বলে জানান তিনি।
শিল্পায়ন ছাড়া কোনো জাতির অর্থনৈতিক উন্নতি হয় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইপিজেড তৈরি করা হচ্ছে। সমগ্র বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। গোটা বাংলাদেশ যাতে উন্নত হয়- সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সব সময় চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময়ই বলে এসেছি আমার সরকার ব্যবসা করবে না। ব্যবসা করবেন ব্যবসায়ীরা। আমরা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবো। আমরা আপনাদের সৃজনশীল প্রয়াসে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। আমরা সরকারে এসে ব্যবসা-বাণিজ্যটা যাতে ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ হয় সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫টি পণ্যে ২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা প্রদান এবং রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ)-এর সংস্থান করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে অনেকে আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, জিএসপি সুবিধা দিয়েছে। অন্তত আমি এইটুকু দাবি করতে পারি, যেখানেই আলাপ করেছি সঙ্গে সঙ্গে এই সুযোগগুলো পেয়ে গেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চিলি, ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার লাভ করেছি। জাপান ও রাশিয়ায় জিএসপি সুবিধার পরিধি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। বাজার বহুমুখী করার জন্য ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশসমূহে রপ্তানি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ফলে সমগ্র বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েরা তো এখন বেশি এগিয়ে এসেছে। তাই আরো ভালোভাবে শিক্ষিত করে, ট্রেনিং দিয়ে একটা শক্তিশালী জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করে তাদের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে দেশকে আরো উন্নত করতে পারবো। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা ছিল। ইতিমধ্যে এলএনজি আমদানি শুরু করে দিয়েছি। ফ্লোটিং এলএনজি টার্মিনাল করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনাল করবো। যাতে গ্যাসের আর কোনো সমস্যা কোথাও না থাকে। যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরো সুবিধা হয়।
দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি শুধু এইটুকুই বলবো, আজকে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত। আমাদের যে উন্নয়ন প্রকল্প তার ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্প্রসারণে তার সরকারের প্রচেষ্টাসমূহ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ- সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।