একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বেশি সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক আসাকে সমস্যা মনে করছে আওয়ামী লীগ। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে দলটি জানিয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে গুরুত্ব দিতে। বেশি সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক আসলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যস্ত থাকতে হবে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মূল কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তারা। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো- চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল ইসিতে এ আপত্তির কথা জানায়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে প্রতিনিধিদল।
বৈঠক শেষে এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ সবার জন্য সমান সুযোগ চায়। তারা বিশ্বাস করে, সবার জন্য স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
তারা নির্বাচন কমিশনকে বলেছে, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক যারা আসবে, তাদের নির্বাচনী আইন এবং পর্যবেক্ষক নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। দেশে ১১৮টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে। বিদেশ থেকেও যদি এ রকম পর্যবেক্ষক আসতে থাকে, তাহলে তাদের নিরাপত্তা দিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগ কি বিদেশি পর্যবেক্ষক আসা নিরুৎসাহিত করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, তারা এটা নিরুৎসাহিত করছেন না। তবে সবাইকে আচরণবিধি ও আইন মেনে চলতে হবে। গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও ইসির কাছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে লক্ষ্য করে বিভিন্নভাবে চারদিক থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা উচিত। আওয়ামী লীগ থেকে আমরা কখনই কোনো উস্কানিমূলক বক্তব্য দেইনি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে কতগুলো বিষয় বলেছি। যেমন আজকাল অনেকগুলো অনলাইন আছে, তাদের কোনো রকম নিবন্ধন নেই এবং স্থানীয়ভাবে অনেক লোকাল টেলিভিশনও গজিয়ে ওঠেছে।
এগুলো সম্পর্কেও আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। যাতে কেউ কোনো রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, কেউ যাতে অপপ্রচার না করে। আর সব থেকে বড় জিনিস জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় যাতে না দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বিএনপির কোনো কোনো নেতা নানান ধরনের কথা বলেছেন। যেমন তারা বলছে নির্বাচন কমিশন ৩০শে ডিসেম্বরের পর কোথায় থাকে আমরা দেখবো। কিংবা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কোথায় থাকে আমরা দেখবো। তার মানে কী? এগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে বলেছি।
এ বিষয়ে কমিশনকে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিতে বলেছি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসার পর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রশাসনে রদবদলের দাবি উত্থাপনকে অবান্তর মনে করেন এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, বিএনপি তো মেনেই নিয়েছে যে, এ সরকার ও প্রশাসনের অধীনেই নির্বাচন করবে। এখন তো রদবদলের দাবি অবান্তর। নির্বাচন ভবনে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। প্রশাসনের রদবদল নিয়ে বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি প্রশাসনের রদবদলের নামে যে দাবি করেছে, তাহলে একেবারে পুরো সরকারকেই উলটপালট করতে হয়। পুরো সরকারকেই বদল করতে হয়। সেটি তো, নয়।
বিএনপি তো মেনেই নিয়েছে যে, এ সরকারের অধীনেই এবং এই প্রশাসনের অধীনেই তারা নির্বাচন করবে। তারা তো নির্বাচনে এসেছে। এখন তো এই প্রশ্ন আমি মনে করি অবান্তর। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান এইচ টি ইমাম। তিনি বলেন, আজকে (গতকাল) আমরা শুনলাম মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যেটি একেবারে নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, সেখানে তিনি একটি সমাবেশ করেছেন।
এখন তো সমাবেশ করার কথা না। সমাবেশ যেই করুক না কেন, আমাদেরকে করলেও সেটি যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, অন্যদের বেলায়ও সেটি প্রযোজ্য। আমরা এখানে এসেছি, আমরা চাই লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড, যে কথা বলছি-সেটা মনেপ্রাণে আমরা বিশ্বাস করি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন কী বলেছেন-এই প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন- তারা ব্যবস্থা নেবেন। আমরা সব সময় বলছি-আইন সবার জন্য সমান, আমাদের কেউ এরকম করলেও তারা ব্যবস্থা নেবেন।
সবার জন্য সমান সুযোগ নেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নির্বাচন কমিশনে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মওদুদ আহমদ বললেই কী বেদবাক্য হয়ে গেল, তাতো নয়। তারা দিনরাত ঝাড়া মিথ্যা কথা বলেন। অনবরতই মিথ্যা কথা বলেন। মওদুদ আহমদ দশ বছর আগে বিশ বছর আগে কী বলেছেন, এখন কী বললেন? আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, লন্ডনে সমপ্রতি ডেইলি টেলিগ্রাফে এবং ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় এসেছে সেখানে ব্যাংকিং আইনে দণ্ডিত একজন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সেখানে তাকে এক মিলিয়ন পাউন্ড দণ্ডিত করা হয়েছে। তারপরও সেই ব্যক্তি এখানে এসেছেন। তিনি বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন। এ বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বলেন, তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সবার জন্য সমান সুযোগ আছে। আইন সবার জন্য সমান। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলে নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, আমি তো মনে করি, এটাই লেবেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড। আইন সকলের জন্য এক। কোনো দলের প্রধান হলে তার জন্য আইন তো অন্য রকম হবে না।
প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন ফজিলাতুননেসা বাপ্পি এমপি, রাশেদুল আলম, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এস এম কামাল হোসেন, দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউসার, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, তানভীর ইমাম এমপি, এনামুল হক চৌধুরী ও ড. সেলিম মাহমুদ।