রংপুরে নিবার্চনী প্রচারে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা দেশে নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার বিজয় হবেই।
বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা অব্যাহত রাখতে এই বিজয় জরুরি মন্তব্য করে তরুণসহ সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ভোট চেয়েছেন তিনি।
রোববার সকালে ঢাকা থেকে রংপুরে গিয়ে সেখান থেকে দুপুরে নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকা পীরগঞ্জে যান শেখ হাসিনা। প্রথমেই স্বামী প্রয়াত এম ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন।
পরে নিবার্চনী জনসভায় যোগ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারুণ্যের কাছে ভোট চাই, মা-বোনদের কাছে ভোট চাই, বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বি সবার কাছে ভোট চাই। আপনারা ভোট দেন, আমরা উন্নয়ন দেব, সমৃদ্ধি দেব, সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব। দোয়া করবেন, যেন ভালোভাবে কাজ করতে পারি।’
পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনে আগে নিবার্চন করতেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের বিজয়ের পর শেখ হাসিনা এই আসন ছেড়ে দিলে সেখানে নিবাির্চত হয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার হন শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তার সমথের্ন পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিবার্চনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের উন্নতি হয়, তার যথেষ্ট উদাহরণ আপনারা দেখেছেন। আমরা যুব সমাজের জন্য ব্যাপক কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কারও কাছে চাকরি চাইতে হবে না, নিজেরা চাকরি দিতে পারবে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
সবার কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আপনারা দোয়া করবেন, যেন দেশের মানুষের কল্যাণ পারতে পারি। বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা শেখ মুজিব চেয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমরা করে দেব। আমি বিশ্বাস করি, নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার বিজয় হবেই।’
নিবার্চনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আজকে ধানের শীষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট। একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যা চালিয়েছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে সেই বিএনপি-জামায়াত মিঠাপুকুর, সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী পুরো এলাকা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, গ্রাম পুড়িয়েছে, রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে, গাছ কেটেছে, আপনারা তাদের কথা একবার চিন্তা করুন।
তিনি বলেন, ‘যারা মানুষের গায়ে আগুন দিয়ে পোড়ায়, ওরা মানুষ না, ওরা দানব। ওদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। আজকে যারা ধানের শীষ নিয়ে আসছে, মানুষ পোড়ার গন্ধ তাদের গায়ে। তাদের থেকে সাবধান থাকবেন। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া চুরি করে আজকে জেলে আছেন। আর তার ছেলে টাকা পাচার করেছে, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানে ছিল, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে, যারা একাধিক সাজাপ্রাপ্ত- এরা দেশের কী উন্নয়ন করবে? এরা দেশের কী কল্যাণ করবে? কাজেই এদের থেকে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে।’
পীরগঞ্জের এই জনসভা শেষে দিনাজপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন শেখ হাসিনা। সেখানে কয়েকটি নিবার্চনী সভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।
এর আগে রোববার সকালে রংপুরের তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক নিবার্চনী জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরো রংপুর একসময় দুভির্ক্ষপীড়িত এলাকা ছিল। আজকে রংপুরের সেই দুদির্ন চলে গেছে। আজকে সুদিন এসে গেছে। এখন আর মঙ্গা নাই, দুভির্ক্ষ নাই।
‘প্রত্যেকটা মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান সব ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। এটা হয়েছে একমাত্র আপনারা বারবার নৌকায় ভোট দিয়েছেন সেই কারণে।’
দেশের উন্নয়নে গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা সম্পন্ন করার জন্য ৩০ ডিসেম্বর আবারও নৌকায় ভোট দিতে রংপুরের ভোটারদের প্রতি আহবান জানান শেখ হাসিনা।
এ জনসভায় তিনি রংপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ আবুল কালাম আহসানুল হক ডিউক চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার জন্য ভোট চান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই এলাকার উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই কাজগুলো শেষ করতে চাই। আমার একটাই লক্ষ্য, আপনারা ভালো থাকবেন। আপনারা নৌকা মাকার্য় ভোট দিবেন, আমাদের প্রাথীের্ক ভোট দিবেন। আমরা যেন আপনাদের সেবা করতে পারি। আমরা নৌকা মাকার্য় ভোট চাই।’
সরকারের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় বলেন, ‘আমরা কৃষকদের জন্য দশ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছে। কৃষকদের কাডর্ দিয়েছি। ওই কাডর্ দিয়ে তারা স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পায় তার ব্যবস্থাও আমরা করেছি।’