একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল এসেছে। এরই মধ্যে সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। অপেক্ষাকৃত নবীন, ক্লিন ইমেজ ও দলীয় আনুগত্বকে প্রাধান্য দিয়ে সংরক্ষিত আসনগুলোতে প্রার্থী দিতে যাচ্ছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে প্রার্থীদের বিষয়ে খোজ খবর নেয়া শুরু করেছেন। তিনি মন্ত্রিসভার মতোই সংরক্ষিত নারী আসনে চমক দিতে চান। গত মেয়াদে যারা সংরক্ষিত আসনে এমপি হয়েছিলেন তাদের বড় অংশই বাদ পড়ছেন। বিতর্কিত ও অদক্ষতার কারণে তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে গত সংসদের জনপ্রিয় ও বাকপটু কয়েকজন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য পুনরায় থাকবেন।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মনোনয়ন সংরক্ষিত আসনের প্রত্যাশীরা। সেই তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। এছাড়া এ ছাড়া চলচ্চিত্র, নাট্যজগতের নামিদামি তারকাসহ বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত নারীরাও চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং তদবির। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন, তারাও এখন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হতে চান।
সুত্রমতে, ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি পদে আসতে ইচ্ছুকদের মধ্যে অনেকে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা গণভবনে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংরক্ষিত নারী এমপি হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার উপযোগীদের নাম চ‚ড়ান্ত করবেন।
জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক ছাত্রনেত্রী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, অভিনেত্রী, শিল্পী, ব্যবসায়ী, দলের জন্য নিবেদিত অন্যান্য কর্মী বিশেষ করে মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ নেত্রীদের মধ্য থেকে ইতিমধ্যেই নাম সংগ্রহ করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য জানান, তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে একঝাঁক নতুন মুখ আসবে এবারের সংরক্ষিত নারী আসনে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নারী যারা বিভিন্ন পেশায় যারা নিজ দক্ষতায় আলোকিত হয়েছেন তাদের কয়েকজনও সংসদে আসার সম্ভবনা কয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনের বেশিরভাগ সংসদ সদস্যরা বাদ পড়লেও জনপ্রিয়তা ও কাজের দক্ষতার কারণে আবরো সংসদ সদস্য হতে যাচ্ছেন কয়েকজন। তারানা হালিম, মাহজাবিন খালেদ, সাবিনা আক্তার তুহিন, সানজিদা খানম, নিলুফার জাফর উল্লাহ, অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, নূর জাহান বেগম মুক্তাসহ কয়েক জন আবরো সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন।
নবীনদের মধ্যে আলোচনায়, ক্লিন ইমেজ ও দলীয় আনুগত্ব নেত্রীদের ভিতরে এগিয়ে আছেন -যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য “ সুমাইয়া চৌধুরী বন্যা”। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২ আসন থেকে দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।এখন সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঢাকা-২ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য প্রার্থী মনে করেছেন তাকেই মননোয়ন প্রদান করেছেন। আমরা সকলের এডভোকেট কামরুল ইসলাম ভাইকে ,মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নৌকাকে বিপুল ভোটে জয় যুক্ত করার লক্ষ্যে আমারা একসাথে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে গিয়েছি জয়ের মালা গলায় না পাবার আগ পর্যন্ত ।
সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্যের জন্য আমি আবেদন করবো এবং আমার বিশ্বাস আমাদের সকলের প্রিয় নেত্রী , দেশরত্ন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিবেন না । তিনি আমাকে একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করবেন।
এছাড়া নতুনদের মধ্যে যারা এগিয়ে আছেন তারা হলেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা ক্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরীন রোসানা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার। বরিশালের জেবুন্নেছা আফরোজ, ময়মনসিংহের মনিরা সুলতানা, গোপালগঞ্জের আরিফা আকতার রুমা ও শেখ মিলি, নীলফামারীর অ্যাডভোকেট তুরিন আফরোজ, মৌলভীবাজারের সায়রা মহসিন, কুষ্টিয়ার সুলতানা তরুণ, চট্টগ্রামের চেমন আরা তৈয়ব এবং ঢাকার আসমা জরিন ঝুমুর নামও আলোচনায় রয়েছে।
এছাড়া বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, অরুণা বিশ্বাস, নাট্যাভিনেত্রী শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচীর নামও শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে আরও ২৫ জেলায় স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নারীনেত্রীর নাম সন্ধান করছে ক্ষমতাসীন দলটি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক জানান, সংরক্ষিত মহিলা আসনে যোগ্যতম প্রার্থী অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যারা দুর্দিনে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন জনপ্রিয় নেত্রীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। নেত্রী (শেখ হাসিনা) এমন গুণসম্পন্ন কর্মীর তালিকা তৈরি করছেন। এছাড়া দশম সংসদে যেসব জেলা সংরক্ষিত এমপি বঞ্চিত হয়েছে, সেসব জেলা থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই আমরা দল মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করব।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন-২০০৪ অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) দল ও জোটভিত্তিক তালিকা তৈরি করবে এবং ভোটার তালিকা ইসিতে টানিয়ে দেবে। এরপর ৩০০ আসনের বিপরীতে ৫০টি সংরক্ষিত আসনে দল কিংবা জোটের অনুকূলে বরাদ্দ করা হবে। গেজেট প্রকাশের নব্বই দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী এমপি নির্বাচন শেষ করতে হবে ইসিকে।
গত ১ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাজন কমিশন জানয়েছে, আগামী সপ্তাহে সপ্তাহে সংরক্ষিত মহিলা আসনে তফসিল ঘোষণা করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন অনুযায়ী সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, এক্যফ্রন্ট ১টি এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল পাবে ২টি আসন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট আসন পেয়েছে ২৫৭টি। প্রতি ৬ আসনে একজন করে সংরক্ষিত মহিলা এমপি নির্বাচিত করার বিধান আছে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ পায় ৪৩টি আসন। জাতীয় পার্টি ২২ এমপির বিপরীতে আসন পায় ৪টি। মহাজোটের অন্যান্য দলের ৬টি বা তার বেশি আসন না পাওয়ায় এককভাবে কেউ সংরক্ষিত আসনে মহিলা এমপির মনোনয়ন দিতে পারবেন না।
দশম জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের ৪২টিই আওয়ামী লীগের। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ৬টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির একটি করে সংরক্ষিত আসনের এমপি রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুত্রে জানা যায়, সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ করবে না তারা। দ্রুতই তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
===========================================
আরও পড়ুন
পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোশাক শ্রমিকদের মজুরি যৌক্তিক হারে বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন। শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরির কয়েকটি গ্রেডে বেতন আশানুরূপ বৃদ্ধি না পাওয়ায় গার্মেন্টস শিল্পের উদ্ভূত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে সরকার গ্রেটগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রোববার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সমন্বিত মজুরি কাঠামোর ঘোষণা দেন।
সূত্র জানায়, দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি গার্মেন্ট শিল্প এবং এ খাতের শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় বিবেচনায় সরকার দ্রুত ত্রিপক্ষীয় মজুরি কমিটি গঠন করে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতের ভিত্তিতে এবং শ্রমিকদের স্বার্থে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে মজুরি সমন্বয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সূত্র মতে, শ্রমিকবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে ১ এবং ২ নং গ্রেডের মজুরি সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে সমন্বয়ের পর প্রতিটি গ্রেডে এই মজুরি যৌক্তিক হারে বাড়বে।
এদিকে সোমবার (১৪ জানুয়ারি) থেকে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিলে কোনও মজুরি দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
রোববার দুপুরে পোশাক শিল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রতিশ্রুত মজুরি প্রদান এবং মজুরি কাঠামো পরিবর্তনের দাবিতে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন পোশাক শ্রমিকরা।