ইউটিউবে বেড়েই চলেছে মানহীন ও অশ্লীল ভিডিওর সংখ্যা। দেশীয় বেশিরভাগ ইউটিউব চ্যানেলগুলোর নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা। যার ফলে যে যার মতোই বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে প্রকাশ করছে। ইউটিউবে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ‘ভাবীর নজর খারাপ’, ‘দুই বউয়ের জ্বালা’, ‘মোটা বউয়ের ছোট জামাই’সহ অনেক মানহীন ও অশ্লীল নাটক, মিউজিক ভিডিও কিংবা শর্টফিল্ম। সংখ্যার দিকে যেমন এসব নির্মাণ বাড়ছে, ভিউয়ের দিক থেকেও এগুলো এগিয়ে রয়েছে। আর্থিক সুবিধা ও বেশি ভিউয়ার্সের জন্য এসব ভিডিও প্রকাশ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। একটি কনটেন্ট প্রকাশের এক মাসেরও কম সময়ে এগুলোতে দেখা যায় ২০ থেকে ৩০ লাখ ভিউ। এদিকে শর্টফিল্মের নামেও বিভিন্ন অশ্লীল সিরিজ ইউটিউবে দেখা যায়।
এগুলোর গল্পের চেয়ে প্রাধান্য থাকে যৌনতা, বিছানার দৃশ্য আর অশ্লীলতায় উস্কানি দেয় এমন সব সংলাপে। দর্শক বিনোদন পাবার আশায় এগুলো দেখে বেশ বিরক্তও হচ্ছে। আবার সাম্পতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওঠে আসা হিরো আলম, রেশমি অ্যালন ও সানাইদের মতো অনেকের অশ্লীল ফ্যান ভিডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ছে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে তরুণরা এগুলোতে আকৃষ্ট হচ্ছে। ফলে সামাজিকভাবে নতুন প্রজন্মের দারুণ অবক্ষয় হচ্ছে বলেও অনেকের মন্তব্য। এই প্রসঙ্গে জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা মীর সাব্বির বলেন, ইউটিউব উন্মুক্ত বাজার। তাই বলে তো যার যা খুশি তা প্রকাশ করবে- এমন হয় না। ইউটিউবে এমন মানহীন অশ্লীল গল্পের ভিডিও দেখলে বেশ লজ্জা
লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় অভিনয় ছেড়ে দিই। আমার মনে হয়, কর্তৃপক্ষদের এই বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেভাবে এগুলো বেড়েই চলছে এটি আমাদের সংস্কৃতির জন্য হুমকি। টেলিভিশনে একটা নাটক প্রচার করতে হলে অনেক নিয়মনীতি মেনেই নির্মাণ করতে হয়। ফলে সেটি পরিবার কিংবা অনেকে একসঙ্গে উপভোগ করার সুযোগ পায়। আমি আশা করি, রাষ্ট্রীয়ভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেবে সরকার। ডিরেক্টর গিল্ডের সভাপতি নির্মাতা-অভিনেতা সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, প্রযুক্তি আমাদের সবকিছু সহজ করে দিয়েছে। বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। সত্যি বলতে আমরা, প্রযুক্তিকে সঠিক ব্যবহার করতে পারছি না। সময়ের সঙ্গে দর্শক এখন ইউটিউবমুখী হয়েছে। এই সুযোগটি ব্যবহার করছে একশ্রেণীর মানুষ। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের সংস্কৃতির অপব্যবহার করছে। প্রশাসনিকভাবে এগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। যে সকল ইউটিউব চ্যানেল থেকে এ ধরনের অশ্লীল কনটেন্ট প্রকাশ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তাহলে ক্রমান্বয়ে এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ওয়েব সিরিজ নির্মাণের জন্যও কিছু নিয়ম-নীতির তৈরি করা হলে কেউ এমন সিরিজ নির্মাণে সাহস পাবে না। শোবিজসংশ্লিষ্টদের মতে, দর্শক বরারবই রুচিশীল কনটেন্ট দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের দেশীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলো দর্শকের সে প্রত্যাশা পূরণে বরাবরই ব্যর্থ। এভাবে চলতে থাকলে, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের দর্শকের মতো আমাদের ইউটিউব দর্শকেরাও ক্রমান্বয়ে বিদেশি নাটক, গান, চলচ্চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। দেশীয় সংস্কৃতির হবে বিলুপ্ত। নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠবে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে।