২০১৫ সালে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ও নতুন নামে লড়াই শুরু করে ঢাকা ডায়নামাইটস। সেই আসরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) নয়া দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বরিশাল বুলসকে হারিয়ে হয় চ্যাম্পিয়ন। পরের আসরেই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয় ডায়নামাইটস। কিন্তু পঞ্চম আসরে তা ছিনিয়ে নেয় রংপুর রাইডার্স। এবার ৬ষ্ঠ আসরে ফাইনালে মুখোমুখি ভিক্টোরিয়ান্স ও ডায়নামাইটস। আজ সন্ধ্যা ৭টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় শিরোপার জন্য মুখোমুখি হবে দুই দল। বিপিএলের অন্যতম শক্তিশালী দল ঢাকা এ নিয়ে তৃতীয়বার খেলছে ফাইনাল। যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান।অন্যদিকে আসরে নয়া অধিনায়ক ইমরুল কায়েস অপেক্ষায় হাতে শিরোপ তুলে নিতে। ঢাকার শক্তিকে সমীহ করলেও গ্রুপ পর্বে দুইবার তাদের হারিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ভিক্টোরিয়ান্স অধিনায়ক। এই কারণেই ঢাকার চেয়ে এগিয়ে থাকার দাবি তার। তিনি বলেন, ‘এগিয়ে থাকার দিক থেকে এটাই বলতে পারেন যে আমরা দুটি ম্যাচে ওদের বিপক্ষে জিতেছি। আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। কারণ একটি দলকে দু’বার যখন হারাবেন তখন আল্টিমেটলি প্রতিপক্ষ দল কিন্তু আমাদের নিয়ে তখন বেশি চিন্তা করবে আমাদের থেকে। এটাই আমার কাছে মনে হয় একটি ইতিবাচক দিক।’
অন্যদিকে গ্রুপ পর্বে দুই বার জয়ের হিসাব করে ফাইনাল ম্যাচে খুব বেশি লাভ নেই পরিসংখ্যান তাই বলে। চিটাগং ভাইকিংসও দুই বার হারিয়েছিল ঢাকাকে। কিন্তু এলিমিনেটরে সেই ঢাকার কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছে মুশফিকুর রহীমের দল। ফাইনালের আগে গতকাল ভিক্টোরিয়ান্সরা এসেছিল অনুশীলনে। তবে বিশ্রামে থেকেই ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত হয়েছে ঢাকা। দলের কোনো সদস্যই আসেননি মাঠে। তবে রংপুরকে উড়িয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা আছে ভীষণ ফুরফুরে মেজাজে। গ্রুপ পর্বে টানা চার জয়ে শুরু করেছিল ঢাকা। এরপর টানা চার হারে বিপিএল থেকে ছিটকে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিজেদের ১২তম ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে জয় নিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে। এরপর জিতে নেয় আরো দুই ম্যাচ। বলার অপেক্ষা রাখে না টানা তিন ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস ফাইনালেও কাজে লাগাতে মরিয়া সাকিবের দল। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে একাই ৪ উইকেট নিয়ে রংপুরকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন। আর রুবেল হোসেন বলেন, ‘সেটা তো আসলে বলা যাচ্ছে না। কারণ কুমিল্লা দলটাও খুব শক্ত দল। ওদের ব্যাটিং লাইনও খুব বড়। ওদের দলে ভালো ভালো বড় বড় অনেক ক্রিকেটার আছে। আমাদের জন্য পরের ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয় যে, এই ম্যাচটা খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। যারা মাঠে তাদের সেরাটা দিতে পারবে তারাই ম্যাচ জিতবে।’
ধারণা করা হচ্ছে আজ দুই দলের শিরোপা ভাগ্য নির্ধারণ করবে অলরাউন্ডাররাই। বিশেষ করে ঢাকার হয়ে মাঠ কাঁপাতে পারেন সাকিব, কাইরণ পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইন। আর কুমিল্লার ডসন, থিসারা পেরেরা, শহীদ আফ্রিদি ও সাইফউদ্দিনরাও কম নয়। অলরাউন্ডারদের লড়াই নিয়ে কুমিল্লার কোচ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি মনে করি যে আসলে এখানে অলরাউন্ডারদের একটা বড় ভূমিকা থাকবে কারণ টিম সাজাতে বা ব্যালেন্স আনতে অলরাউন্ডারদের ভূমিকা সব সময়ই বেশি। ঢাকা টিমের এই অ্যাডভানটেজটা আছে কারণ তাদের তিন-চারজন অলরাউন্ডার আছে, তারা যদি খেলে তারা বাড়তি ২ জন প্লেয়ার খেলাতে পারে। আমাদের ভালো অলরাউন্ডার আছে, তারপরও বলবো ঢাকা এদিক থেকে অনেক এগিয়ে আছে। কিন্তু আমি আমার স্ট্রেন্থের কথা বলবো, হয়তো পুরো টুর্নামেন্টে ইনডিভিজ্যুয়াল পারফরম্যান্স খুব নজর কাড়েনি কিন্তু দলীয় সমন্বয় খুব ভালো ছিল এবং সঠিক জায়গায় সঠিক খেলোয়াড় আছে, যেটি খুব বেশি জরুরি।’ কুমিল্লার অলরাউন্ডারদের বাইরে বড় শক্তি দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ও বিপিএলের এই আসরে দারুণ ধারাবাহিক শামসুর রহমান শুভ।
তবে দুই দলের লড়াই ছাড়িয়ে আলোচনায় থাকবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট। কারণ শুরু থেকেই এই উইকেটে ব্যাটস্যানদের যুদ্ধ করতে হয়েছে রান পেতে। তাই ফাইনালের উইকেট নিয়ে আছে নানা চিন্তা। কেমন উইকেট চান এই বিষয়ে কুমিল্লার অধিনায়ক বলেন, উইকেট তো আসলে সব সময় প্রত্যাশা করি যে ব্যাটিং উইকেট হবে এবং ব্যাটসম্যানেরা ভালো করবে। একই সঙ্গে স্পিনার এবং পেসাররা সাহায্য না পায় তাহলে তো ওদের জন্য কঠিন। একটি স্পোর্টিং উইকেট হলে আমার মনে হয় ফাইনালটি সবাই বেশ উপভোগ করবে।
এক নজরে ৫ ফাইনাল
ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স-বরিশাল বারনার্স (২০১২)
টস: ঢাকা (ফিল্ডিং)
বরিশাল: ১৪০/৭ (ব্র্যাড হগ ৭০*, আহমেদ শেহজাদ ২৮, মুমিনুল ১১, আফ্রিদি ৩/২৩, আজমল ১/২৩, নাভেদ উল হাসান ২/২৪)।
ঢাকা: ১৫.৪ ওভার, ১৪৪/২ (ইমরান নাজির ৭৫, বিজয় ৪৯*, নাজিমুদ্দিন ১৩, আলাউদ্দিন বাবু ১/৯, সোহরাওয়ার্দী শুভ ১/২৪)।
ফল: ঢাকা ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: ইমরান নাজির
সিরিজ সেরা: সাকিব আল হাসান (খুলনা রয়েল বেঙ্গলস)
ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স-চিটাগং কিংস (২০১৩)
টস: চিটাগং (ফিল্ডিং)
ঢাকা: ১৭২/৯ (বিজয় ৫৮, সাকিব ৪১, আশরাফুল ২৪, রুবেল ৪/৪৪, তাসকিন ২/২৮, লোকুহেটিগ ২/২৯)।
চিটাগং: ১৬.৫ ওভার, ১২৯ (মাহমুদুল্লাহ ৪৪, জেসন রয় ৪০, সোহান ১৪, আলফনসো টমাস ৩/১৯, মোশাররফ ৩/২৬, মাশরাফি ১/২৫)।
ফল: ঢাকা ৪৩ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: মোশাররফ হোসেন রুবেল
সিরিজ সেরা: সাকিব আল হাসান (ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-বরিশাল বুলস (২০১৫)
টস: কুমিল্লা (ফিল্ডিং)
বরিশাল: ১৫৬/৪ (মাহমুদুল্লাহ ৪৮, নাফিস ৪৪*, প্রসন্ন ৩৩, স্টিভেন্স ১/১৯, জাইদি ১/২৬, মাশরাফি ১/২৮)।
কুমিল্লা: ২০ ওভার, ১৫৭/৭ (ইমরুল ৫৩, কাপালি ৩৯*, আহমেদ শেহজাদ ৩০, মাহমুদুল্লাহ ২/২৩, কুপার ২/৩১, সামি ১/২৪)।
ফল: কুমিল্লা ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: অলক কাপালি
সিরিজ সেরা: আসহার জাইদি (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)
ঢাকা ডায়নামাইটস-রাজশাহী কিংস (২০১৬)
টস: রাজশাহী (ফিল্ডিং)
ঢাকা: ১৫৯/৯ (লুইস ৪৫, সাঙ্গাকারা ৩৬, ব্রাভো ১৩, ফরহাদ রেজা ৩/২৮, সামিত প্যাটেল ১/৮, মিরাজ ১/২২)।
রাজশাহী: ১৭.৪ ওভার, ১০৩ (মুমিনুল ২৭, সাব্বির ২৬, প্যাটেল ১৭, রাহী ২/১২, সানজামুল ২/১৭, সাকিব ২/৩০)।
ফল: ঢাকা ৫৬ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: কুমার সাঙ্গাকারা
সিরিজ সেরা: মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (খুলনা টাইটান্স)
রংপুর রাইডার্স-ঢাকা ডায়নামাইটস (২০১৭)
টস: ঢাকা (ফিল্ডিং)
রংপর: ২০৬/১ (গেইল ১৪৬*, ম্যাককালাম ৫১*, চার্লস ৩, সাকিব ১/২৬)।
ঢাকা: ১৪৯/৯ (জহুরুল ৫০, সাকিব ২৬, লুইস ১৫, অপু ২/৮, উদানা ২/২৫, সোহাগ গাজী ২/৩২)।
ফল: রংপুর ৫৭ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: ক্রিস গেইল
সিরিজ সেরা: ক্রিস গেইল (রংপুর রাইডার্স)