রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য যে মোটরসাইকেলের আরোহী ছিলেন তার চালক উবারে রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন।
একথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
ডিসি তেজগাঁও আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই উবার চালক ও ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালককে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুর্ঘটনার স্পষ্ট কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। বাইক চালক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পুলিশ যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে সে যেই ঠিকানা দিয়েছিল, সে অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভুল ঠিকানা দিয়েছিল।
তিনি বলেন, চালককে খুঁজে পেতে উবার কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য চাওয়া হলেও তারা কোনও সহযোগিতা করেননি। উবারের কাছে তার যে ঠিকানা ছিল সেখানে খোঁজ নিয়েও সত্যতা পাওয়া যায়নি। উবারের এসব গাফিলতির কারণে সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তায় পরদিন ২৪ এপ্রিল ভোরে মোহাম্মদপুর থেকে বাইক চালক সুমনকে আটকসহ বাইকটি জব্দ করা হয়।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কোনও ব্যক্তির বিষয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া ভুল ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করে ফেললো উবার কর্তৃপক্ষ। যার ফলে রাইডার সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো। যে কোনও ঘটনার পর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দ্রুত চেষ্টা করি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের পদে পদে বাধা পেতে হলো।
তিনি বলেন, উবারসহ এসব রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে চালানোর জন্য চালকের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা আছে কিনা সেগুলোও যাচাই-বাছাই করেন না। রাইড শেয়ারিংয়ে আরোহীর ব্যবহৃত হেলমেটের গুণগত মান খুবই নিম্ন। যার কারণে দুর্ঘটনা হলে ঐ হেলমেট দিয়ে সেইফ থাকা যায় না।
গাফিলতির জন্য উবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার আরও তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় যারই গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাক, তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
বিপ্লব কুমার সরকার আরও বলেন, উবার চালক সুমনের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও সে অনেক কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করছিল। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ঘাতক কাভার্ডভ্যানটির ছবি পাওয়া যায়। ফুটেজে ভ্যানটির নাম্বার পাওয়া না গেলেও ‘ইনফো ফোর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তেজগাঁও এলাকার অফিসে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস থেকে ঘাতক চালক আনিসুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাইকচালক ও কাভার্ডভ্যানচালককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, দুইজনই বেপরোয়া গতিতে ড্রাইভ করছিলেন। বাইকের চেয়ে যেহেতু কাভার্ডভ্যানের গতি বেশি, সেহেতু কাভার্ডভ্যানটি বাইকটিকে ওভারটেক করার সময় ধাক্কা দেয়। তখনই বাইকের যাত্রী লাবণ্য রাস্তায় পড়ে যান এবং কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ঠ হন