গাড়িচালকদের বেপরোয়া আচরণে প্রতিদিনই সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ঈদ সামনে রেখে তাদের সেই বেপরোয়া আচরণ যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে। গতকাল রবিবার পাঁচ জেলায় দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে শিশু-নারীসহ ১৯ জনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩১ জন।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হয়েছে। সকালে সুনামগঞ্জে বাস-লেগুনার সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়। নাটোরের বড়াইগ্রামে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে এক শিশু নিহত হয়। বাগেরহাটে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় আরেক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিকেলে লক্ষ্মীপুরে ট্রাকচাপায় এক নারী নিহত হয়েছেন। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস-লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ২০ জন। নিহতরা হলোÑ উপজেলার কয়ড়া কৃষ্ণপুর গ্রামের নূর ইসলাম, ফজলু (৩৮), সবুজ (১৬), হাফিজ (৩০), বোয়ালিয়া পাগলা গ্রামের রেজাউল করিম (লেগুনাচালক), বড়হর গ্রামের আক্তার হোসেন, কেউকান্দি গ্রামের আব্দুল মান্নান, কয়ড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী ও আব্দুল
বারী। এদের মধ্যে ফজলু, সবুজ ও হাফিজ ভাই।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী ও উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নাদির হোসেন জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পাবনাগামী পাবনা এক্সপ্রেসের একটি বাস বোয়ালিয়া সেতুর ওপর ওঠামাত্র উল্লাপাড়া থেকে ছেড়ে আসা হাটিকুমরুলগামী একটি লেগুনার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে লেগুনার চালকসহ ৮ জন নিহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আরও একজন। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক চারজনকে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা গরু ব্যবসায়ী ও ধানকাটা শ্রমিক ছিল। এদিকে নিহতদের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ : গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বাস ও লেগুনার সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়েছে। উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলোÑ উপজেলার দূর্বাকান্দা গ্রামের ইস্তু মিয়ার ছেলে সাগর আহমদ (১৫), একই গ্রামের ফজল আলীর ছেলে মিলন মিয়া (১৬), মোহাম্মদ আলীর ছেলে আফজাল মিয়া (১৭), গাগলি গ্রামের নোমান (২৪) ও শাল্লা উপজেলার নিপেশ চন্দ্র দাশ (২২), দিরাই উপজেলার সাচনি গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে ফয়জুল করিম (৩০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার নারায়ণ চন্দ্র সাহার ছেলে শিপন কুমার সাহা (৩৩)। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, ঢাকা থেকে লিমন পরিবহনের একটি বাস দিরাই উপজেলা সদরে যাত্রী নামিয়ে সুনামগঞ্জ শহরে ফিরছিল। অন্যদিকে মদনপুর থেকে দিরাই আসছিল একটি লেগুনা। গনিগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে বাস ও লেগুনার সংঘর্ষ হয়। খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলে মারা যায় লেগুনার পাঁচ যাত্রী ও চালক নোমান। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আরও একজন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। চালকদের চোখে ঘুম ঘুম থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নিতুন দাশ।
নাটোর : নাটোরের বড়াইগ্রামে ঈদ করতে বাড়ি যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারিয়া তাসনিম (৮) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকের এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে তার পরিবারের ৬ জন। মারিয়া ঢাকার কদমতলী থানার এসআই আব্দুল জলিলের মেয়ে। বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, সকালে জলিল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়ায় যাচ্ছিলেন। পথে বনপাড়া এলাকায় একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাইক্রোটি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারিয়া মারা যায়।
বাগেরহাট : গতকাল দুপুরে ফকিরহাটের কাঁঠালতলা গ্রামে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মুফতা আক্তার (৬) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। মুফতা ওই গ্রামের মুক্ত শেখের ছেলে। কাটাখালী হাইওয়ে থানার এসআই মলয়েন্দ্র নাথ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর সদরের দালাল বাজারে ট্রাকচাপায় অটোরিকশাযাত্রী খুশি বেগম (৪৫) নিহত হয়েছেন। তিনি সদর উপজেলার গঙ্গাপুর এলাকার শাহজাহান মিয়ার স্ত্রী। সদর থানার ওসি লোকমান হোসেন জানান, গতকাল লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়ক হয়ে সিএনজি অটোরিকশা গঙ্গাপুর থেকে দালাল বাজারে যাওয়ার পথে দ্রুতগতির একটি ট্রাকের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়। এতে আহত খুশিকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।