‘ভুল মেশিনে’ ডিএসসিসির মশার ওষুধ পরীক্ষা!

উচ্চআদালত ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশের পর নতুন করে মশার ওষুধ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। এরইমধ্যে বিদেশ থেকে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করতে শুরু করেছে সংস্থা দুটি। এই ওষুধের একটি নমুনা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করেছে। শুক্রবার (২ আগস্ট) এই ওষুধের ফিল্ড-টেস্ট হয়েছে। কিন্তু যে ওষুধটি সংগ্রহ করার জন্য পরীক্ষা করা হয়েছে, সেটি ব্যবহারের জন্য বিদ্যমান মেশিন উপযোগী নয়। এটি এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য ‘ভুল মেশিন’। ওই ওষুধ ব্যবহার করতে হলে মেশিন পরিবর্তন করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের বারান্দায় বায়ার করপোরেশন নামে ভারতীয় কোম্পানির ‘Aque k Delthrean (Deltamethrin) 2%EW’ নামের ওষুধটির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ওষুধটি জার্মানির তৈরি। ওই ওষুধটি পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে সিটি করপোরেশন যেসব মেশিন ব্যবহার করছে, সেগুলো ডিজেল মিশ্রিত ওষুধ ব্যবহারের উপযোগী। এ মেশিনগুলোয় পানির মিশ্রণে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা যায় না।

জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র সহকারী ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদের অধিকাংশ মেশিন ডিজেলে তৈরি ওষুধের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু পানি দিয়ে তৈরি ওষুধ অনেক মেশিনে সাপোর্ট করবে না। এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য এই ‘মেশিনটি ভুল মেশিন।’ এটা সত্য, আমাদের জন্য খারাপ খবর। যদি এই ওষুধগুলোর কার্যকারিতা সঠিক থাকে, আর রিপোর্ট ভালো পাওয়া যায়, তাহলে যেসব মেশিন ওই ওষুধ সাপোর্ট করবে, সেসব মেশিন দিয়ে ব্যবহার করবো। তবে এখনও ওই ওষুধের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি। সবে মাত্র ফিল্ড টেস্ট হয়েছে।’’

জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, ‘এটি টেকনিক্যাল পার্সনরা বলতে পারবেন। আমার জন্য বলা কঠিন।’

জানা গেছে, বর্তমানে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ডিএসসিসির ৯৪০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪২টি হস্তচালিত, ৪৪৭টি ফগার ও ৫১টি হুইল ব্যারো মেশিন। ৪৪২টি হস্তচালিত মেশিনের মধ্যে ২০৮টি, ৪৪৭টি ফগার মেশিনের মধ্যে ১৮৬টি অচল ও ১৬টি আংশিক অচল এবং ৫১টি হুইল ব্যারো মেশিনের মধ্যে ১৮টি মেশিন অচল রয়েছে। সব মিলিয়ে তিন ধরনের ৯৪০টি মেশিনের মধ্যে ৪২৮টি মেশিনই অচল। বর্তমানে এসব মেশিনের মধ্যে ৩৪৯টি ফগার মেশিন, ৪১৬টি হস্তচালিত মেশিন ও ১৮টি হুইল ব্যারো মেশিন সচল রয়েছে। এই মেশিনগুলোর মধ্যে মাত্র ফাল্‌স ফগ, হোয়াইট ফগ ও সুইং ফগ নামে তিন ধরনের মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ফাল্‌স ফগ ও সুইং ফগ মেশিনে এই ওষুধটি সাপোর্ট করে। এই দুই ধরনের মেশিন রয়েছে মাত্র ১০০টি।

ডিএসসিসির মশকনিধনকর্মীরা বলেন, ‘আমাদের যেসব মেশিন দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে পানি মেশানো যায় না। কোনোভাবে পানি স্পর্শ পেলে মেশিন বিকল হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় এই মেশিন দিয়ে কীভাবে আমরা ওষুধ দেবো?’ মেশিন তো এই ওষুধ সাপোর্ট করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *