সোনারগাঁয়ে মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে গলা কেটে হত্যার ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকারী নিজেও একটি মসজিদের ইমাম। সে দিদারুলের বন্ধু। ব্যবসার টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ইমাম দিদারুল ইসলামকে হত্যা করে। প্রযুক্তির সাহায্যে মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে বুধবার ভোরে সোনারগাঁ থানার এস আই আজাদ শিবপুর থানা পুলিশের সহায়তায় ঘাতক ওহিদুজ্জামান (২৮)কে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত ওহিদুজ্জামান নড়াইল কালাবাড়ীয়া পশ্চিম পাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাক শেখ ওরফে টুকুর ছেলে। ২২শে আগস্ট সোনারগাঁও উপজেলার মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটলেও পুরো বিষয়টি ক্লু-লেস থেকে যায়। মাত্র ৬দিনের ব্যবধানে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে।
বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ পিপিএম (বার), বিপিএম (বার) জানান, মূলত আর্থিক লেনদেন নিয়েই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন দিদারুল।
দিদারুল ইসলামের কাছ থেকে সোনার বার কেনার কথা বলে কয়েক দফা লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয় তারই বন্ধু মো. ওহিদুর জামান। সে নিজেও মাদারীপুরের শিবচরের একটি মসজিদের ইমাম এবং একে অপরের বন্ধু। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চেয়ে চাপ দিলে দিদারুল ইসলামকে খুনের পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার আগের রাতে ২০শে আগস্ট দিদারের সঙ্গে মসজিদে দেখা করে এবং বলে আগামীকাল অর্থাৎ ২১শে আগস্ট রাতে এশার নামাজের পরে পাওনা টাকা ফেরত দিবে। ওহিদুর শিবচরের পাঁচচর এলাকা থেকে আগেই একটি চাপাতি ক্রয় করে রাখে এবং সোনারগাঁও মুগরাপাড়া থেকে ঘুমের ওষুধ ও কোকাকোলার বোতল কিনে। পরে কোকের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিদারুল ইসলামকে খাইয়ে অচেতন করে। তারপর চাপাতি দিয়ে গলা কেটে দিদারুলকে হত্যা করে। হত্যার পরে দিদারুলের ব্যবহৃত খাতায় ‘হিযবুত তাওহিদের সদস্য, সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছে তাই তাকে আমরা মেরে ফেলেছি’ এমন একটি চিরকুট লিখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘাতক ওহিদুর হত্যাকাণ্ড শেষ করে মসজিদের ওজু খানায় গোসল করে এবং রক্ত মাখা লুঙ্গি পার্শ্ববর্তী ডোবায় কচুরিপানার মধ্যে ফেলে রেখে ঢাকার মিরপুর হয়ে মাদারীপুর চলে যায়। হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নিষিদ্ধ সংঘঠন হিযবুত তাওহিদের নাম ব্যবহার করে চতুর ওহিদুল।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ইমাম দিদারুলের ভাই মিজানুর রহমান সোনারগাঁ থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। মসজিদের পাশের পুকুর থেকে রক্তমাখা পোশাক ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার হলে পুলিশ হত্যাকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে শিবচর থেকে ওহিদুরকে গ্রেপ্তার করা হলে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দিদারুলকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এবং ঘটনার বর্ণনা দেন। প্রেসবিফ্রিংয়ে আরো জানানো হয়, ঘাতক ওহিদুলকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।