ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মারধর এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভারত সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসন তুলে নেয়ার পর ওই এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মারধর এবং নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করেছে কাশ্মীরি জনগণ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেছে। গ্রামবাসীরা জানায়, লাঠি দিয়ে তাদের মেরেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া বৈদ্যুতিক শকও দেয়া হয়েছে তাদের।
এ সম্পর্কে এক গ্রামবাসী বলেন, সৈন্যরা বাড়ি বাড়ি আসে এবং মানুষদের ধরে নিয়ে যায়। একদিন আমাদের দুই ভাইকে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় তারা। সেখানে আরও কয়েকজন গ্রামবাসী ছিল। এরপরই আমাদের মারতে শুরু করে। আমরা তাদের জিজ্ঞেস করছিলাম, আমরা কী করেছি, আমাদের মারছ কেন? তারা কিছুই শোনেনি, মেরেই যাচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের শরীরের প্রতিটা অংশে মেরেছে। কখনও লাথি দিয়েছে কখনও লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এমন মারের কারণে যখন আমরা অচেতন হয়ে যেতাম তখন আমাদের ইলেকট্রিক শক দেয়া হতো।
ওই গ্রামবাসী বলেন, আমরা বলছিলাম আমরা নির্দোষ। তারপরও তারা কেন এমন করছে তা জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু কিছুই শোনেনি তারা। তখন আমি তাদের বলি, আর মেরো না, এবার গুলি করে দাও। আমি আল্লাহর কাছে চাচ্ছিলাম যেন আমাকে নিয়ে যায়। কারণ, ওই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলাম না।
অন্য এক তরুণ গ্রামবাসী বলেন, সৈন্যরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যারা পাথর ছুঁড়েছে তাদের নাম বলতে। জবাবে আমি বলি, কারা ছুঁড়েছে আমি জানি না। এরপর তারা আমাকে জুতা, কাপড় এবং চশমা খুলতে বলে।
ওই তরুণ আরও বলেন, কাপড় খোলার সঙ্গে সঙ্গে তারা আমাকে রড এবং লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। তারা আমাকে প্রায় দুই ঘণ্টা মেরেছিল। মারের কারণে যখন আমি অচেতন হয়ে যাই তখন আমাকে জাগিয়ে তুলতে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়।
এদিকে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা বিবিসি প্রতিবেদককে তাদের আঘাতে চিহ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কর্মরত ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব অভিযোগ যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি। এছাড়া ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী গ্রামবাসীর এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন এবং সমর্থনযোগ্য’ নয় বলে উল্লেখ করেছে।
নানামুখী বিধি-নিষেধের কারণে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীর অঞ্চলটি বলতে গেলে স্তব্ধ হয়ে আছে। গত ৩ আগস্ট সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। এরপরই সেখানকার অবস্থার অবনতি ঘটে।
উত্তেজনা দমাতে সেখানে ১০ হাজারেরও বেশি অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়। এছাড়া আটক করা হয় ৩ হাজারেরও বেশি রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী এবং কর্মীকে। এদের অনেককে রাজ্যের বাইরে জেলে রাখা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে এ ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। কাশ্মীর ছিল ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। কিন্তু এখন এটি দুইভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্র সরকার।