যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে ডেমোক্রেটরা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষতি করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাহায্য চেয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রাথমিকভাবে এ খবর অস্বীকার করলেও ধীরে ধীরে তার বিরুদ্ধে নতুন প্রমাণ উঠে আসছে। বুধবার হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত এক ফোনকলের প্রতিলিপিতে দেখা যায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির কাছে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী-প্রত্যাশী জো বাইডেন, তার ছেলে ও বিশেষ কৌসুলি রবার্ট মুয়েলারকে নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, জেলেনস্কির সঙ্গে ২৫ জুলাই এক ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। তাতে বাইডেনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে তদন্তের প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমনকি তদন্তের স্বার্থে হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, বাইডেনের ছেলে নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। বাইডেন তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেকে সে বিষয়ে জানতে চায়। তো, আপনি (মার্কিন) অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে মিলে যা-ই করতে পারেন, তা অসাধারণ হবে। বাইডেন বড়াই করে বলেছিল যে, সে তদন্ত থামিয়ে দিয়েছিল। তো আপনি সেটা একটু খতিয়ে দেখতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প ও তার আইনজীবী রুডি জিলিয়ানি বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বাইডেন ২০১৬ সালে ইউক্রেনের শীর্ষ সরকারী কৌঁসুলি ভিক্টর শোকিনকে বরখাস্তের দাবি জানান ও এতে সফলও হন।
শোকিনের কার্যালয় থেকে ইউক্রেনিয়ান গ্যাস কোম্পানি বুরিজমা হোল্ডিংস-এর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। তখন বুরিজমা হোল্ডিংস-এর বোর্ড পরিচালক ছিলেন জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন। এজন্য তিনি মাসে ৫০ হাজার ডলার পেতেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন চাপ দিয়ে ইউক্রেনের সরকারকে বলেছেন, ভিক্টর শোকিনকে সরান না হলে তাদেরকে ১ বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ নিশ্চয়তা আমেরিকার দেওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া হবে না। ট্রাম্প, জিলিয়ানি ও অন্যান্যদের অভিযোগ হলো, এই চাপ দেওয়ার মাধ্যমে ভাইস প্রেসিডেন্ট মূলত শোকিনের তদন্ত থেকে বুরিজমা, তথা নিজের ছেলেকে বাঁচাতে চাইছিলেন।
তবে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, জো বাইডেন দুর্নীতি করেছেন বা ইউক্রেনে নিজের ছেলের কাজের কারণে প্রভাবিত হয়েছেন। তবে সমালোচকরা বিশ্বাস করেন, এই ঘটনায় অন্ততপক্ষে এক ধরণের ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’, বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব হয়েছে।
তবে এই অভিযোগের বিপক্ষে পালটা যুক্তিও আছে। সেটি হলো, ওই সময় কেবল বাইডেনই শোকিনকে বরখাস্তের দাবি জানাননি। তখন মার্কিন ও ইউরোপিয়ান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও শোকিনকে সরানোর দাবি জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, শোকিন ওই সময় বুরিজমার বিরুদ্ধে তদন্ত সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করছিলেনও না। বরং, বিভিন্ন কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়া ও নিজেই দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমা কমবেশি সকল দেশই তাকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল।
শোকিনের স্থলে যিনি এসেছিলেন, সেই ইউরি লুটসেঙ্কো ১০ মাস ধরে বুরিজমার বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছিলেন। বুরিজমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে তিনি তদন্ত শেষ করেন।