২২শে অক্টোবর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দল যাচ্ছে পাকিস্তান সফরে। ঠিক তার পরদিনই যাচ্ছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলও। নিরাপত্তার শঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিয়েছে সাহসী সিদ্ধান্ত। যদিও নারী দলের কোনো বিদেশি কোচ যাচ্ছেন না। তিন ভারতীয় কোচিং স্টাফের বিকল্প হিসেবে পাঠানো হচ্ছে দেশিদের।
বলতে গেলে দেশি কোচিং স্টাফ ও সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখেই এই সফরের সিদ্ধান্ত। তবে আগামী বছর আইসিসির এফটিপি অনুযায়ী দুটি টেস্ট ম্যাচ ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলার কথা রয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। প্রশ্ন হচ্ছে তারা বাংলাদেশকে কোথায় আতিথ্য দেবে?
নিজ দেশে নাকি দুবাইয়ে! তারা নিজেদের দেশে ক্রিকেট ফেরাতে মরিয়া। তাই চাইবে শ্রীলঙ্কার মতো টাইগারা এ সফরে পাকিস্তানেই আসুক।
তেমনটি হলে বড় বাঁধা হতে পারে টাইগারদের বিদেশি কোচরা। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান কোচ থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফের পাঁচজনই দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক।
তারা যদি সেখানে না যেতে চান তাহলে কী হবে?
বিকল্প কোচ পাঠানো হবে? ‘না’ শব্দটি স্পষ্ট করেই বললেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দল পাকিস্তান সফরে যাবে কি না সেটি অবশ্যই বোর্ডে সিদ্ধান্ত। সেখানে সব বিষয় দেখা হবে। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে যেমন ভাববো তেমনি বিদেশি কোচদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্যায়ন করবো। তারা রাজি না থাকলে তো জোর করে পাঠতে পারবো না। সেক্ষেত্রে অবশ্য বিকল্প ভেন্যু দুবাই হবে। এক কথায় আমাদের জাতীয় দলের গোটা সেট-আপ রাজি থাকতে হবে। আর নিরাপত্তা নিয়েও আমাদের শতভাগ নিশ্চয়তা থাকতে হবে।’
বিসিবির বর্তমান দুটি দলের পাকিস্তান সফর ইঙ্গিত দিচ্ছে সেখানে জাতীয় দলের যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। এ নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘আইসিসির চলমান এফটিপি অনুযায়ী আমাদের একটা কমিটমেন্ট আছে। যেখানে পাকিস্তন আতিথ্য দেবে বাংলাদেশকে। দুটি টেস্ট ম্যাচ ও তিনটি টি-টোয়েন্টি সম্ভবত। সেক্ষেত্রে আপনারা জানেন যে, পাকিস্তান সাধারণত তাদের ভেন্যু হিসেবে দুবাই বা অন্য জায়গাকে বেছে নিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর করছে। আমাদের দলের সফরের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা ছাড়পত্র। আমরা বিষয়টা নিয়ে কাজ করছি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর হাইকমিশনের সাথে। তাদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ আকরাম খানও বলেছেন পরিস্থিতি ঠিক থাকলে সফর হবে। নারী দল ও অনূর্ধ্ব-১৭ সফরে আগেও নিরাপত্তা পরিদর্শকের রিপোর্ট নেবে বিসিবি। সেখান থেকে পাওয়া প্রতিবেদনও জাতীয় দলের জন্য গুরুত্ব পাবে। এ বিষয়ে সিইও নিজামুদ্দিন সুজন বলেন, ‘আমরা একইভাবে চেষ্টা করছি যে মেয়েদের যাওয়ার আগে সিকিউরিটি ইন্সপেকশনটা হবে। তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয় এবং আমরা যাতে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাই।’
বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক। এছাড়াও বোলিং কোচ ল্যাঙ্গাভেল্ট, ব্যাটিং পরামর্শক নিল ম্যাকেঞ্জি, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কোচ, ফিজিও জুলিয়ান ক্যালেফাতো একই দেশের নাগরিক। কম্পিউটার অ্যানালাইসিস্ট ভারতীয়। তাই পাকিস্তানে যেতে হলে তাদের ইচ্ছাটা বড় হয়ে দাঁড়াবে বাংলাদেশের সামনে। কারণ পাকিস্তানে যেতে বিদেশি কোচদের অনুমোদন লাগবে তাদের নিজ দেশেরও।
সঙ্গে তাদের পরিবারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় জড়িত। তারা যদি শেষ পর্যন্ত রাজি না হয় তাহলে পাকিস্তানে দল পাঠনো হবে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চাপ দিয়ে লাভ হবে না। তাদের ভাবতে হবে বিকল্প ভেন্যু নিয়ে। কোচদের মতামতের গুরুত্ব নিয়ে আকরাম খান বলেন, ‘অবশ্যই কোচদের মতামতের গুরুত্ব দেয়া হবে। কারণ তাদের নিরাপত্তাও আমাদের বড় একটি চিন্তার কারণ। সেখানে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলা হবে। তারা যেতে রাজি না হলে আমাদের বিকল্প কোচ পাঠানোর কোন সুযোগ নেই নারী দলের মতো। তবে আমরা চেষ্টা করবো। পাকিস্তানে আমরা দুটি দল পাঠিয়েছিও। তবে জাতীয় দলে বিষয়টা তেমন না যে ইচ্ছা হলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। বোর্ডে আলোচনা হবে, সবদিক দেখা হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত। তার মধ্যে কোচদের মতামত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।’