এবার মিয়ানমার থেকে একদিনে ৮টি ট্রলারে করে ৬৫০ দশমিক ৯২৩ মেট্রিক টন (৬ লাখ ৫০ হাজার ৯২৩ কিলোগ্রাম) পেঁয়াজ টেকনাফের স্থলবন্দরে এসেছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে ২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সাগরপথে রয়েছে। পেঁয়াজ বোঝাই ট্রলারগুলো দু/তিন দিনের মধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গত ৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার থেকে প্রথম চালানে ২০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিলেন মেসার্স এন এইচ এন্টারপ্রাইজের রনজিত দাশ। এরপর থেকে গত ২৫ দিনে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ৩ হাজার ৫৭৩ দশমিক ১৪১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মিয়ানমার থেকে এসেছে।
সোমবার একদিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৮টি ট্রলারে করে কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামে ৬৫০ দশমিক ৯২৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসে পৌঁছে। ট্রলার থেকে পেঁয়াজগুলো খালাসের পর ট্রাকে করে দ্রুত দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ৮টি ট্রলার সোমবার বিকেলে নাফনদীর টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিতে এসে পৌঁছে। শ্রমিকেরা এসব বস্তা ভর্তি পেঁয়াজ ট্রলার থেকে খালাস করে ট্রাকে বোঝাই করেছেন। প্রতিটি বস্তায় ৫০ কিলোগ্রাম করে পেঁয়াজ রয়েছে। সন্ধ্যার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পেঁয়াজ ভর্তি ৩৫টি ট্রাক সারিবদ্ধভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের উদ্দেশ্যে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
এদিকে কক্সবাজারের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা করে। অথচ গত রোববার রাতেও এ পেঁয়াজ বিক্রয় হয়েছিল ৭০ টাকায়। এক লাফে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা বেড়ে গেছে।
দিদারুল আলম নামে এক মুদির দোকানদার জানান, মিয়ানমার থেকে টেকনাফে পেঁয়াজ এলেও সেগুলো চট্টগ্রামে চলে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয়রা সহজে এসব পেঁয়াজ পাচ্ছে না। আবার এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার ঘুরে আসার কারণে এখানে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
আমদানিকারকরা বলেন, চাহিদার অনুপাতে মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম রয়েছে। তবে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত থেকে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এখন মিয়ানমারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪৫ টাকা। এই পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পৌঁছাতে পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরিসহ সাড়ে ৫ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর মিয়ানমারে চলে গেলে সেখানেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাবে।
তারা বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুত করেছেন। এর মধ্যে মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে পেঁয়াজ বোঝাই আরও ১৫-২০টি ট্রলারে ২ হাজার মেট্রিক টনের মতো পেঁয়াজ সাগরপথে রয়েছে। দুই তিন দিনের মধ্যে সেগুলো টেকনাফ স্থলবন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১০-১২ জন ব্যবসায়ী ৩ হাজার ৫৭৩ দশমিক ১৪১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। যার আমদানি মূল্য ১৫ কোটি ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৫৭ টাকা। এর আগে গত জুলাই মাসে ৮৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হলেও আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে কোনো পেঁয়াজ টেকনাফে আসেনি।
টেকনাফ স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করায় স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে থেমে থেমে পেঁয়াজ আমদানি করেন। তবে বাজারে দাম পাওয়া গেলে মিয়ানমার থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টনের মতো পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ পঁচনশীল দ্রব্য। এক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি পেঁয়াজে লাগলে নষ্ট হয়ে যাবে। টেকনাফ স্থলবন্দরে পেঁয়াজ লোড-আনলোড করার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
টেকনাফ স্থলবন্দর কাস্টমস সুপার আবছার উদ্দিন জানান, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ছে। জেটিগুলোতে পেঁয়াজ ভর্তি ট্রলারের ভিড় বাড়ার কারণে অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রলার ভিড়তে পারছে না। এতে করে চলতি মাসে (সেপ্টেম্বর) মাসিক লক্ষ্যমাত্রায় ধ্বস নামতে পারে। সরকারি নির্দেশনা থাকায় বন্দর ও কাস্টমস এর যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানি করা এসব পেঁয়াজ দেশের বাজারে পৌঁছাতে চালান করা হচ্ছে।
স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ৮টি ট্রলারে পেঁয়াজ এসে পৌঁছেছে। মিয়ানমার থেকে আরও পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সংকট মেটাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে স্থলবন্দরে আসা পেঁয়াজ সব পণ্যের আগে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।