আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তবে মাঠের আন্দোলন স্থগিত করলেও হত্যাকারীদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আজ বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী শপথের মাধ্যমে চলমান মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনের ইতি টানা হবে। গতকাল সন্ধ্যায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের পক্ষে কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়ে জানান ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সায়েম। এসময় তিনি বলেন, বুধবার শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মাঠের আন্দোলনের ইতি টানছি। তবে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট দেয়ার পর অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা না পর্যন্ত আমরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেব না। এ বিষয়টি আমরা আমাদের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক স্যারকে জানিয়ে দিয়েছি।
সায়েম বলেন, আমাদের ১০ দাবির মধ্যে তিনটি দাবি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। আমরা দেখেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুততার সাথে আসামিদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা তাদের ওপর সন্তুষ্ট ও ধন্যবাদ প্রকাশ করছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তিনি এ বিষয়ে সজাগ না থাকলে এত দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা নেয়া হতো না।
তিনি বলেন, বুয়েট প্রশাসনের কাছে আমাদের পাঁচটি দাবি ছিল। সেসব দাবির অধিকাংশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ কারণে আমরা বুয়েট প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে আগামীকাল বুধবার থেকে আমাদের সব আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। সেদিন সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মিলে বুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে শপথ পাঠ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে তিনি আরো বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই আমরা চাই না আমাদের আন্দোলন দীর্ঘায়িত করে তাদের সুযোগ করে দিতে। সায়েম বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়া হলেও আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আবরার হত্যার চার্জশিট দেয়ার পর বুয়েট প্রশাসন অপরাধীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার পর আমরা ক্লাসে ফিরবো। আমরা চাই না হত্যাকারীদের সঙ্গে একই কালচারে আমরা বেড়ে উঠি। উল্লেখ্য, গত ৬ই অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ইলেট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামী করে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এ ঘটনায় এজহারভুক্ত ও সন্দেহভাজন ২০ জনকে আটক করেছে। যাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে আসামীরা আদালতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এদিকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১২ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।