দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েও নিরাপত্তাহীনতায়

দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা বাংলাদেশিদের জীবন ক্রমশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। কেপটাউনে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু শিবিরের সামনে গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশিরাও। বাংলাদেশিরাই নির্দিষ্টভাবে টার্গেট না হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী হামলার শিকার হচ্ছে তারা। হাফিজ মুহাম্মদ তাদেরই একজন। এএফপি গতকাল বলেছে, হাফিজ একজন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলীয় দেশ কেপটাউনে তিনি থাকেন। সেখানে তিনি দেখেছেন কীভাবে দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা এখানে নিরাপদ নই, আমরা নিরাপদ নই বাংলাদেশেও।

কেপটাউন থেকে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত শত বিদেশি নাগরিক বুধবার কেপটাউনের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে, যাতে তাদেরকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। একটি ব্যানারে লেখা হয়েছে, একটি স্লোগান: ‘আরো বেশি বিলম্ব হয়ে যাওয়ার আগেই উদ্বাস্তুদের জীবন বাঁচান।’

বেশির ভাগ বিক্ষোভকারী গত ৯ই অক্টোবর থেকে কেপটাউনের জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনের অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে চলেছেন। তাদের উদ্বেগ এবং তার প্রতি কোনো অঙ্গীকার না আসা পর্যন্ত অতিসত্বর তারা ধর্মঘট ছাড়বে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সমাবেশে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা পার্লামেন্টের দিকেও মার্চ করেছে। এবং তারা একটা পরিষ্কার বার্তা পাঠিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা তাদের সঙ্গে সমঝোতা করছি। কিন্তু হত্যা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিককালে বেশকিছু সহিংস ঘটনায় বাংলাদেশিরা সেখানে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। গত সেপ্টেম্বরের গোড়ায় কিছু বাংলাদেশি মালিকানাধীন দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। এটা ঘটে জোহানেসবার্গ এবং প্রিটোরিয়ায়। ওই ঘটনায় অন্তত পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়, যদিও তারা কেউ বাংলাদেশি ছিলেন না। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি হাইকমিশন বাংলাদেশিদের সতর্কতার সঙ্গে জীবনযাপন করতে অনুরোধ করেছে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের সতর্কতা ঘন ঘন জারি করা হচ্ছে। এ বিষয়টি পরিষ্কার যে বাংলাদেশিরাও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কামরুল হাসান আলেকজান্দ্রিয়া থেকে বলেছিলেন, তারা আমাদের সব কিছুই পুড়িয়ে দিয়েছে। কামরুল বলেছেন, দোকানগুলোতে তিন থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে হামলা চালানো হয় ।

বিদেশি-বিদ্বেষী সহিংসতায় ২০০৮ সালে অন্তত ৬২ জন নিহত হয়। ২০১৫ সালে ৭ জন এবং চলতি বছরে ১২ জন নিহত হয়েছেন। তবে এদের বেশির ভাগই দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। এসব ঘটনা বেশি ঘটছে জোহানেসবার্গে।
চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা এবং কর্মসংস্থানের অভাব তীব্র হওয়ার পর থেকে এসব সহিংসতা বাড়ছে।
উদ্বাস্তু হাইকমিশনের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদানের পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ এবং দক্ষতাপূর্ণ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, অন্য দেশে সরিয়ে নেয়ার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিমধ্যেই দুই লাখ ৬৮ হাজার উদ্বাস্তু এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করেছে। তাদের বেশির ভাগই সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং কঙ্গো থেকে এসেছে। কিন্তু আশ্রয়প্রার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা অজানা।

উদ্বাস্তুরা বলেছেন, আসলে আমাদের নিজেদের দেশগুলোর চেয়ে এখানে থাকতে পারাটা আর শান্তির নয়। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশি তরুণ শাহাদাত নিহত হন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন তিনি উন্নত জীবনের আশায়। সে জোহানেসবার্গ এলাকায় ডাকাতদের গুলিতে নিহত হলেন।
শাহাদাতের বড় ভাই মো. রুবেল বলেছেন, তারা সবকিছু দোকান থেকে লুটে নেয়ার পর তার ভাইকে গুলি করে আহত করে যায়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *