গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সবথেকে বড় শহর করাচির রাস্তা থেকে অপহরণ হয়েছেন তরুণী দুয়া মাঙ্গি। তবে এখনো তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার বন্ধু হারিস সুমরো অপহরণের সময় তার সঙ্গেই ছিলেন। বাঁধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে। ঘারে গুলি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হারিসের অবস্থা এখনো অস্থিতিশীল।
প্রথমে অপহরণের পেছনের উদ্দেশ্য কী নিশ্চিত না হওয়া গেলেও পাকিস্তান পুলিশ শুক্রবার জানিয়েছে, খুব সম্ভবত মুক্তিপনের জন্যই তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে দ্রুতই এই অপহরণের বিষয়টি ফেসবুকে ব্যাপক হারে প্রচারিত হয়। দুয়া মাঙ্গি ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একজন শিক্ষিত, সফল ও স্বাধীন নারী।
ফলে কট্টোর রক্ষনশীল পাকিস্তানি সমাজে এই অপহরণের জন্য তাকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। দেশজুড়ে বিদ্রুত চলছে তার অপহরণ নিয়ে। বলা হচ্ছে, স্বাধীন নারীর ক্ষেত্রে এমনটাই হওয়া উচিৎ। কেউ কেউ আবার একধাপ এগিয়ে অপহরণকারীদের বাহবা দিচ্ছেন।
করাচিতে এ ধরণের অপহরণ নিত্য দিনের ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসার পূর্বে তাই বিষয়টি সবার অগোচরেই থেকে গিয়েছিলো। তার বোন লাইলা মাঙ্গি প্রথম দুয়ার একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে অপহরণের কথাটি জানায়। লাইলা তার অনুসারীদের অনুরোধ করে যেনো কেউ তার বোনের খবর পেলে তার পরিবারকে জানায়। তার এক কাজিন একই পোস্ট করে টুইটারে।
তবে সাহায্যের চেয়ে বরং দুয়া মাঙ্গির পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করতে শুরু করে দেশটির ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। অনেকে অশ্লীল নানা মন্তব্য করে দাবি করে, এমন মেয়ের সঙ্গে এমনই হওয়া উচিৎ। যদিও দুয়া মাঙ্গি যে ধরণের পোশাক পরতেন তা ছিলো খুবই সাধারণ। কিন্তু নারী হয়ে কাজ করার কথিত অভিযোগ তুলে সাহায্যের পরিবর্তে আরো হয়রানি করা হচ্ছে দুয়ার পরিবারকে।
বিবিসি উর্দু জানিয়েছে, পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌনতা মিশ্রিত অশ্লীল মন্তব্য অতি সাধারণ একটি বিষয়। তবে এমন স্পর্শকাতর ইস্যুতে এ ধরণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আশাহত হয়েছেন দেশটির অধিকারকর্মীরা। পুলিশ কর্মকর্তা শিরাজ আহমেদ বিবিসিকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের এত সমর্থন পুলিশের কাজকে কঠিন করে দিচ্ছে। মনোবিজ্ঞানী দানিকা কামালও একমত হয়ে বলেন, এ ধরণের নির্লজ্জ্ব কুরুচিপূর্ন মন্তব্য ভিক্টিম পরিবারের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দেয়।