গুগল, অ্যাপল, টেসলা সহ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল রাইটস এডভোকেটস। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের পণ্যে ব্যবহৃত কোবাল্ট খনন করতে গিয়ে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআরসি) প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। এমন ১৪ মৃত শিশুর বাবা-মায়ের পক্ষে এই মামলা দায়ের করেছে রাইটস এডভোকেটস। এই প্রথম বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এমন মামলা দায়ের হলো। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, অ্যাপল, গুগল, ডেল, মাইক্রোসফট ও টেসলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ইন্টারন্যাশনাল রাইটস এডভোকেটস। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি পণ্য, যেমন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক গাড়ি ইত্যাদির জন্য কোবাল্ট-চালিত ব্যাটারি প্রয়োজন হয়। আর এই কোবাল্ট খননে ব্যবহৃত হয় শিশুরা। খনন কাজে প্রাণ হারানো ১৪ শিশুর পরিবারের পক্ষে মামলাটি দায়ের হয়েছে।
মামলার আসামি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শিশুদের মৃত্যুতে সহায়তা করা ও গুরুতরভাবে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। শিশুদের বাবা-মায়েরা দাবি করেছে তাদের সন্তানেরা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কাজ করতো। শিশুদের মৃত্যুতে জোরপূর্বক শিশুশ্রম ও অন্যান্য বিষয়ে ক্ষতিপূরণ চাইছে মামলা দায়েরকারীরা।
দ্য গার্ডিয়ান জানায়, রিচার্জযোগ্য লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরিতে কোবাল্ট একটি আবশ্যক উপাদান। অ্যাপল, ডেল, গুগল, মাইক্রোসফট ও টেসলার লাখ লাখ পণ্য তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। অল্প দামে প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য তৈরিতে কোবাল্টের অব্যাহত চাহিদা প্রতি বছর বেড়ে চলেছে। গত পাঁচ বছরে তা পূর্বের তুলনায় তিনগুণ হয়েছে। ২০২০-এর মধ্যে তা আরো দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুরো বিশ্বের ৬০ শতাংশ কোবাল্ট আসে পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে। ডিআরসিতে কোবাল্ট খননকে ঘিরে আগে থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, পরিবেশ ধ্বংস ও শিশু শ্রমের অভিযোগ রয়েছে। রাইটস এডভোকেটসের মামলায় বলা হয়েছে, সেখানে শিশুদের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য করেছে খনন প্রতিষ্ঠানগুলো। কাজের পরিবেশের কারণে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে বা গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আর এই খনন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করেছে প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলো।
মৃত শিশুদের পরিবারের দাবি, যুক্তরাজ্যের খনন প্রতিষ্ঠান গ্লেনকোরের জন্য অবৈধভাবে কাজ করতো শিশুরা। গ্লেনকোর ব্রাসেলভিত্তিক লোহা ও খনন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউমিকোরের কাছে কোবাল্ট সরবরাহ করতো। সেখানে প্রক্রিয়াজাত হয়ে সে কোবাল্ট যেতো অ্যাপল, গুগল, টেসলা, মাইক্রোসফট ও ডেল-এর কাছে। এ ছাড়া, চীনা খনন প্রতিষ্ঠান ঝেজিয়াং হয়ায়িউ কোবাল্ট-এর বিরুদ্ধেও শিশুদের জোরপূর্বকভাবে খাটানোর অভিযোগ ওঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানটিও অ্যাপল, মাইক্রোসফট ও ডেল-এর কাছে কোবাল্ট সরবরাহ করে বলে দাবি করেছে মামলাকারীরা।
মামলার মৃত শিশুদের বাবা-মায়েরা দাবি করেছে, চরম দারিদ্রের কারণে খননের কাজে বাধ্য হয়েছিল তাদের শিশুরা। বিপজ্জনক এই কাজের জন্য প্রতিদিন তাদের মজুরি দেয়া হতো দুই ডলার করে।