পারভেজ মোশাররফের ফাঁসির আদেশ

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে দেশটির এক আদালত। ২০০৭ সালে সাংবিধানিক জরুরি অবস্থা জারির দায়ে এই নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদের বিশেষ আদালতের তিন সদস্যের এক বেঞ্চ। তিন জনের মধ্যে দুই জন ফাঁসির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। দেশটির ইতিহাসে এমন রায় এই প্রথম। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে পূর্ণ রায় প্রকাশ করা হবে। এ খবর দিয়েছে দ্য ডন।

খবরে বলা হয়, মোশাররফের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত বলেছে, ২০০৭ সালের ৩রা নভেম্বর বেআইনিভাবে জরুরি অবস্থা জারি করে মোশাররফ সংবিধানকে পদদলিত করেছিলেন। ২০১৩ সালের ২০শে নভেম্বর এই অভিযোগ নিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করতে বিশেষ আদালতটি গঠিত হয়।

২০১৪ সালের ৩১শে মার্চ আদালত মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরপর ২০১৬ সালের ১৯শে জুন তাকে পলাতক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রসঙ্গত, বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন মোশাররফ।

মোশাররফের ফাঁসির আদেশ দেয়া বিশেষ আদালতের প্রধান বিচারক হচ্ছেন পেশওয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারক ওয়াকার আহমেদ সেথ। বাকি দুই জন হচ্ছেন, সিন্ধ হাইকোর্টের বিচারক নাজার আকবর ও লাহোর হাইকোর্টের বিচারক শহিদ করিম। প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত ছয়বার পুনর্গঠিত হয়েছে আদালতটি। মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। তবে মামলাটি নানা জটিলতায় দীর্ঘায়িত হয় ও ২০১৬ সালে পাকিস্তান ত্যাগ করেন মোশাররফ।

এর আগে ১৯শে নভেম্বর মামলার রায় দেয়ার কথা ছিল আদালতের। তবে চূড়ান্ত রায়ের আগে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকার রায় ঘোষণা স্থগিত করতে নতুন পিটিশন দায়ের করে। ইসলামাবাদ হাইকোর্টে করা ওই পিটিশনে বিশেষ আদালতকে মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়া থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেয়ার আবেদন জানানো হয়। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট পিটিশন গ্রহণ করে ও বিশেষ আদালতকে রায়টি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। বিশেষ আদালত ২৮শে নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করে। তবে ২৭শে নভেম্বর ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ফের রায় স্থগিতের নির্দেশ দেয় ও সরকারের পক্ষ থেকে একটি দলকে বিশেষ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। সরকারের ওই দলের হাজিরার পর আদালত ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত রায় স্থগিত করে।

মঙ্গলবার সরকার পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট আলি জিয়া বাজওয়া জানান, তারা আরো তিনটি নতুন পিটিশন দায়ের করেছেন। একটি পিটিশনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি আব্দুল হামিদ দোগার ও সাবেক আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদকের সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বিচারপতি আকবর এ ব্যাপারে প্রমাণ চেয়েছেন। আইনজীবী বাজওয়া দাবি করেন, শওকত আজিজই জরুরি অবস্থা জারি করতে বলেছিল মোশাররফকে। তবে আদালত তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। বিচারক আকবর, এজন্য চাইলে নতুন মামলা দায়ের করতে বলেছেন আইনজীবীকে।
মোশাররফের কাউন্সেল এডভোকেট রাজা বশির জানান, তিনি আদালতের কাছে মোশাররফের বিবৃতি রেকর্ড করার আবেদন জানিয়েছেন। তবে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত, বিচারক আকবর জানান, এর আগে মোশাররফকে ছয় বাস বিবৃতি জমা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি তা গ্রহণ করেননি।

১৯৯৯ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অপসারণ করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান শাসন করেন মোশাররফ। মোশাররফের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ মামলা দায়ের করেন শরিফই। তবে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে চিকিৎসা করাতে পাকিস্তান ছাড়েন মোশাররফ। পরে শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে আর দেশে ফেরেননি তিনি। গত মার্চে তিনি দুবাইয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *