ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার বদলা নেয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান। সেই হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেছেন, তারা ইরানের ৫২টি স্থাপনাকে টার্গেট করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনা। যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করে, কারো ক্ষতি করে অথবা কাউকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় তাহলে ইরানের ওইসব স্থাপনায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালানোর হুমকিতে ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংগঠন ইউনেস্কো এবং বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন এসব স্থাপনা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সুরক্ষিত রাখতে, এমনকি যুদ্ধের সময়ও সুরক্ষিত রাখতে একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।
এসব সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালানোকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরাকে নিহত হন কাসেম সোলাইমানি। এরপরই উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। হুমকি-পাল্টা হুমকি চলতে থাকে। এ নিয়ে শনিবার প্রথম ধারাবাহিকভাবে টুইট করতে থাকেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এতে তিনি বলেন, ইরানের ৫২টি স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইরানের উচ্চমাত্রার এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং ইরানের সংস্কৃতি। এসব স্থাপনায় অতি দ্রুততার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে হামলা চালানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থে বা কোনো মার্কিনির ওপর হামলা হলেই তার প্রতিশোধ নিতে তিনি এই হামলার হুমকি দেন।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তার এ হুমকিকে আরেকটু নরম করে দেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পরবর্তীতে ট্রাম্প আবার তার হুমকির কথা জানান দেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তারা আমাদের লোকদের হত্যা করবে, নির্যাতন করবে, ক্ষতি করবে, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখতে দেয়া হবে এবং আমাদের লোকদের উড়িয়ে দেয়া হবে, আর আমরা তাদের সাংস্কৃতিক স্থাপনা স্পর্শ করতে পারবো না? এটা হতে পারে না।
ট্রাম্পের এ বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্বার্থ বা কোনো মার্কিনি আক্রান্ত হলে তিনি ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালাতে চান। কিন্তু সোমবার প্রেসিডেন্টের পক্ষাবলম্বন করেন হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা কেলিয়ানি কনওয়ে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বলেন নি যে, তিনি ইরানের সাংস্কৃতি স্থাপনাকে টার্গেট করেছেন। তিনি শুধু প্রশ্ন করেছেন। পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কি ইরানের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালাবেন কিনা। জবাবে তিনি বলেছেন, যুদ্ধের আইন অনুসরণ করা হবে।
ওদিকে এমন অবস্থায় জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংগঠন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজোলে বলেছেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই ১৯৭২ সালের একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। এতে বিশ্বের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সুরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। ১৯৫৪ সালে তারা যুদ্ধের সময় সাংস্কৃতিক সম্পদকে সুরক্ষিত রাখা সম্পর্কিত আরেকটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। তবে এখানে উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ইউনেস্কো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ ছিল ইউনেস্কো ইসরাইলবিরোধী। ওদিকে ডেমোক্রেট দলের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং ক্রিস মারফি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর হুমকি দিচ্ছেন। একই রকম মন্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফের কণ্ঠে। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সাংস্কৃতিক স্থাপনা সুরক্ষিত।বৃটেন প্রত্যাশা করে এর প্রতি সম্মান দেখানো হবে।