চীনে ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে রাশিয়ার মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে। ইতিমধ্যে ইন্টারনেটে এ সংক্রান্ত গুজব ছড়ালেও মূলধারা টেলিভিশন চ্যানেলে স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেখা যায়নি। তবে এবার ভ্রেমিয়াসহ বেশ কয়েকটি রুশ গণমাধ্যম করোনা ভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের জন্য আলাদা স্লট বরাদ্দ করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
রুশ টেলিভিশনগুলোতে যেসব প্রোগ্রাম প্রচারিত হয় তার একটা বড় অংশে যে কোনো কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দোষ চাপানোর রীতি দেখা যায়। এবার করোনা ভাইরাসের জন্যও তারা বরাবরের মতো পশ্চিমা এলিটদের দায়ি করেছে। ভ্রেমিয়া শব্দের অর্থ সন্ধ্যা যারা মূলত একটি সংবাদ চ্যানেল। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বে আলোচনা শুরু হলে তারা বেশ জোর দিয়ে এর পেছনে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র থাকার বিষয়টি প্রচার করে যাচ্ছে। এ নিয়ে তাদের প্রতিবেদনগুলোও বেশ অস্পষ্ট।
তারা সরাসরি ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করছে না। তবে এমন ভাবে বলছে যাতে অনেকেই মনে করতে পারেন যে হয়তো এর জন্য আসলে যুক্তরাষ্ট্রই দায়ি।
সম্প্রতি তাদের সংবাদে বলা হয়, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়টি চিন্তা থেকে বাদ দেয়া যায় না। কারণ এর নামেই যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। করোনা মানে মুকুট। আর বিভিন্ন সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুন্দরিদের মাথায় মুকুট পড়িয়ে দিয়েছেন। তাই বিজ্ঞানীরা সেখান থেকেই করোনা নামকরণ করেছেন ভাইরাসের। আরেক রুশ চ্যানেল ওয়ানের কিরিল ক্লেইমিয়নভ ধারণা করে বলেন যে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকার বিষয়টি বাদ দেয়া যায় না। আপনি হয়তো বলবেন নির্বোধের মতো শোনাচ্ছে। কিন্তু আমিও আপনার সঙ্গে একমত হতাম যদি না এটি আমাদের প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে না থাকতো।
এসব প্রতিবেদনে একপাক্ষিকভাবে এমন একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া হয় যিনি বলেন যে, চীনের করোনাভাইরাস কৃত্রিমভাবে বানানো হয়েছে। এর জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও সেখানকার ঔষুধ কোম্পানিগুলোই দায়ী। প্রতিবেদনে ক্রেমলিনের মিডিয়া এবং কর্মকর্তাদের ছড়ানো কিছু পুরনো তথ্য আবারো তুলে ধরা হয়। যাতে বলা হয়, জর্জিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগার রয়েছে যেখানে মানুষের উপর জৈবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়। এর পর চ্যানেল ওয়ানের প্রতিবেদক অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন যেখানে বলা হয় যে, নতুন করোনাভাইরাস শুধু এশিয়ার মানুষদের আক্রান্ত করে এবং এটা এক ধরণের জৈবিক মারণাস্ত্র।
বিবিসি জানিয়েছে, টেলিভিশনের স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরালে বোঝা যায় যে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে মারাত্মক উদ্বেগ তৈরি করেছে। দেশটি এরইমধ্যে চীনের সঙ্গে রেল এবং বিমান চলাচল কমিয়ে এনেছে। চীন থেকে ফেরত নেয়া রুশ নাগরিকদের সাইবেরিয়ার একটি হাসপাতালে দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মস্কোতে অবস্থিত একটি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির শীর্ষ পর্যায়েও। রাশিয়ার দৈনিক ভেদোমস্তি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া সবার তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে।