করোনা ভাইরাস কারণে ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে ঢাকা ছেড়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। যারা রাজধানীতে আছেন তারাও ঘরবন্দি। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে কেউ বের হচ্ছে না। রাস্তায় টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থায় রাজধানীর বাজারগুলোও প্রায় ফাঁকা। বেচা-কেনা না হওয়ায় অনেক দোকানে সবজি পচতে দেখা গেছে। মানুেষর মাঝে বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক। করোনার বিস্তার রোধে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ ঘোষণার পর এমন অবস্থা চলছে।
বাজারগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি ও মাছবাহী যানবাহনও কম এসেছে। অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবার হিসেবে কিছুটা বাড়তি এলেও তা বিক্রি হয়নি।
সবজি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ক্রেতার দেখা মিলছে না। ব্যবসায় এখন ভাটা পড়েছে। আরেক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বেচাকেনা বেশি হয়েছে। তখন পণ্য নিয়ে কাড়াকাড়ি ছিল। এখন কেনার কেউ নেই। মালও পঁচছে।
রাজধানীর কাওরানবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারেও তেমন বেচাকেনা ছিল না। ক্রেতা তেমন না থাকায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোও ছিল নীরব সুনসান। ছুটির আমেজ বিরাজ করছে নিত্যপণ্যের বাজারে। বাজারে পণ্য বিক্রি কমলেও রাজধানীর আবাসিক এলাকার মুদি দোকানগুলোতে পণ্য বিক্রি বেড়েছে বলে জানান দোকানিরা।
ফলে বাজারে কমে গেছে সবজির দাম। বেশিরভাগ সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে। কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামও। তবে নতুন করে ডাল, আটা, আদা ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
মগবাজারের মধুবাগ বাজারের ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী বলেন, সপ্তাহখানেক আগে থেকে ভোক্তারা বেশি করে পণ্য কিনে বাসায় মজুদ করে রেখেছেন। এ কারণে ছুটির সময় পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। এই বাজারের সবজি বিক্রেতা খলিল বলেন, অন্যান্য দিন সবজি বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ সবজি রয়ে গেছে। প্রতি কেজি বেগুন ও টমেটো ১০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করেছেন। পাইকারি এই বাজারে অন্যান্য সবজির মধ্যে করোলা ২০ টাকা, বরবটি ৩০ টাকা কেজি। আবাসিক এলাকাগুলোতে ভ্যান নিয়ে সবজি বিক্রেতারাও কম দামে হাঁকডাক দিয়েছেন। কিন্তু ক্রেতা তেমন একটা জোটেনি।
মধুবাগের শেরে-বাংলা স্কুলের সামনে ভ্যানভর্তি সবজি নিয়ে এসেছিলেন আকতার। তিনি বলেন, সব নিত্যপণ্য বাসায় মজুদ করলেও সবজি মজুদ করার সুযোগ নেই। এ আশায় কম দামে পেয়ে বেশি করে সবজি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না ক্রেতারা। আবার যারা আসছেন তারাও তেমন একটা কিনছেন না। তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে দিনভর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কাঁচাবাজারের পাশাপাশি সুপারশপগুলো চালু রয়েছে। উচ্চ ও মধ্যবিত্তের ক্রেতারা এসব জায়গা থেকে কেনাকাটা করেন। তাও অন্যসব দিনের চেয়ে কম। সুপারশপগুলোতে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যাক্সোসল দিয়ে ভাইরাসমুক্ত হয়ে ক্রেতারা সুপারশপে প্রবেশ করছেন। এ ছাড়া ক্রেতারাও সতর্ক হওয়ায় মাস্ক, গল্গাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন।
চাহিদা কম থাকায় বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও ডজনে ১০ টাকা কমে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় নেমেছে। তবে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ছোলা বুটের ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা এবং খেসারি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা। আটার দামও বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা হয়েছে। এ হিসাবে কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে। বাজারে চালের দাম আগের মতোই বাড়তি রয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ গুটি ও স্বর্ণা মোটা চাল পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ দোকানে এ চাল পাওয়া যায়নি।