নওগাঁর রাণীনগরে ঢাকা থেকে আসা আল আমিন (২২) নামের এক যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বাড়িতে উঠতে দেয়নি গ্রামবাসী। আল আমিনকে তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান না করে করোনা সন্দেহে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে আল আমিনের মৃত্যু হয়।
আল আমিন রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের অলংকার দীঘি গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে। আল আমিনের মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে আসলে গ্রামের কোন লোকজন করোনাভাইরাস সন্দেহে তার মৃতদেহের কাছে যাচ্ছে না। কিন্তু আল আমিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না সেই পরীক্ষা কোনও হাসপাতালের চিকিৎসকরা করেনি কিংবা কোন নমুনাও সংগ্রহ করেনি। আল আমিনের বাবা মকলেছুর রহমান জানান, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতো। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে আল আমিন গায়ে প্রচণ্ড জ্বর আর কাশি নিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁয় আসে। এরপর শনিবার সকালে বাড়িতে আসার সময় সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সন্দেহে স্থানীয় মেম্বার ও গ্রামের কতিপয় লোকজন তাকে গ্রামে উঠতে দেয়নি। তিনি জানান, বাধ্য হয়ে সকালেই এলাকার ভেটি স্ট্যান্ড থেকে চিকিৎসার জন্য আদমদীঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তার ছেলেকে। সেখানে তার কোনও চিকিৎসা না করেই তাকে ফিরিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর আবারও তার ছেলেকে ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা না করেই বারান্দায় আল আমিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাখা হয়। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য প্রথমে রাণীনগর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখানে করোনাভাইরাস সন্দেহে চিকিৎসকরা দেখেই হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়। নওগাঁ হাসপাতালে পৌঁছার পর সেখানেও আল আমিনকে ভালোভাবে না দেখে কোনও চিকিৎসা না দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যান বলে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন লিখে দিয়ে চলে যান চিকিৎসকরা।
মকলেছুর রহমান জানান, সেগুলো দিয়েও তার ছেলের শরীরের জ্বর কোনোভাবেই কমে না। এরপর কোন চিকিৎসক তার ছেলের আশপাশে আসে নাই। পরে তার ছেলে মারা যান। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, ছেলেটা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন খবর পাওয়ার পর তার পরিবারকে বলেছি চিকিৎসকের প্রতিবেদন নিয়ে গ্রামে আসতে। যদি চিকিৎসকরা বলেন আল আমিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয় তাহলে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। আর যদি সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসা করান। গ্রামে আসার দরকার নেই। গ্রামবাসী ও আশেপাশের মানুষের কথা ভেবেই আল আমিনকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন (অংকুর) বলেন, আল আমিনের শরীরে ১শ’ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশী জ্বর ছিল। তাকে যখন আমরা হাসপাতালে পাই তখন তিনি অবচেতন অবস্থায় ছিল। যেহেতু তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল সেহেতু আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, মৃত আল আমিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না তা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার কথা বলবো। তবে তিনি হয়তো বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। এছাড়াও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আল আমিনের দাফন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সিভিল সার্জন ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, যেহেতু নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই সেহেতু আমরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই।