কোথায় আজ মানুষের বিবেক?

কি হবে অক্সফোর্ড থেকে পিএইচডি করে, কি হবে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে, কি হবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনেক বড় ডিগ্রি লাভ করে, মেডিকেল থেকে ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়েও লাভ কী? যদি না হতে পারি মানুষের মতো মানুষ, মানবতার ছিটেফোটা যদি নাইবা থাকে মনে। আমরা নিজেদের মানুষ বলে গর্ববোধ করি। কিন্তু কোন কারণে নিজেদের মানুষ বলে দাবি করি? মানুষ বলতে কেবল দুই হাত, দুই পা, দুই চোখ, নাক, মুখ ইত্যাদি অঙ্গ থাকাই যথেষ্ট? না! এসব বাহ্যিক আবরণ কখনো প্রকৃত মানুষ চিহ্নিত করতে পারে না। মানুষ হলো তার স্বভাব, তার আচরণ, তার কর্ম, মানবতা সব কিছুর সমষ্টি। আর একজন মানুষের সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয় তার মনুষ্যত্ব বা বিবেক দ্বারা। যারা মানবতার পক্ষে কথা বলে না এমনকি চোখের সামনে দেখেও তা না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায় তারা মানবজাতির বড় দুশমন, তার চেয়ে বেশি দুশমন ও শত্রম্ন হলো তারা, যারা মানবতার মুখোশ পরে অমানবিক হয়ে বিশ্বকে অশান্তিতে রাখে। আহা রে মানুষ! আমরা সেই ছোট্ট থেকে বইয়ে পড়ে আসছি, জেনে আসছি, ‘মানুষ মানুষের জন্য’। আজ বিশ্ব মিডিয়ায় শুনতে পাই, নিজ দেশের চিত্রে দেখতে পাই তার উল্টো চিত্র। কেউ নিরাপদে নেই। কোথাও না কোথায় যুদ্ধ, খুন, মারামারি, সংখ্যালঘুদের উপর অমানবিক নির্যাতন দিনকে দিন লেগেই আছে। কেউ স্বার্থের টানে বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্ত। সে কি দেশের স্বার্থে বিশ্ব দরবারে সুস্থ মানবতা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখতে পারে না? আদৌ তা তার উচিত নয় কি? কেউ কেউ আবার শান্তিতে নোবেল পেয়ে বিশ্বের শান্তিতে অশান্তি লাগিয়ে দিচ্ছে! তাহলে সে শান্তির নোবেল দিয়ে আমরা কি করব? এটাই কি মানবতার নিদর্শন? কেউ কেউ আবার শান্তির ধর্মের প্রচারে এসে ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি বলে অশান্তির লোকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দিল আমরা স্বার্থপর। কোনো শান্তি আমরা চাই না, চাই শুধু ক্ষমতা!

যদিও বেশকিছু সংগঠন সত্যিকার অর্থেই মানবতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, যার সংখ্যা সীমিত। মানবাধিকার বলতেই তো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকারকে বোঝায়; অসহায়, দুঃখী যারা তারাও তো মানবাধিকার সংগঠনের সেবা পাওয়ার সমোপযোগী। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিচ্ছবি মাঝেমধ্যে পুরোটাই উল্টো। যার যত তেল মর্দনের ক্ষমতা বেশি তার পক্ষেই সব মানবতা উপচে পড়ে। ভৌগোলিক কারণে দেশ, ধর্ম, বর্ণ, জাতি ভিন্ন কিন্তু সবাই তো মানুষ। তাহলে কেন এত অমানবিক? তারা কি এসব বৈষম্য উপলব্ধি করে না? গুণীজনদের লেখায় পড়েছি ও বয়োজ্যেষ্ঠদের থেকে জেনেছি- এই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় আদালত হচ্ছে মানুষের বিবেক। সমাজে অনেক মানুষ আছেন, যাদের বিবেক আছে ঘুমিয়ে। আবার সমাজে এমনও কিছু মানুষ আছেন যারা স্বপ্ন দেখেন মানুষের কল্যাণের। শত বছর ধরে মানুষের জীবন পাল্টে দেওয়া থেকে শুরু করে জীবনের নতুন অর্থ নির্মাণের ক্ষেত্রে এগুলোর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। অনেক বছর বেঁচে থাকলেই কেবল বড় মানুষ হওয়া যায় না। একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে যদি একটি প্রাণ বাঁচে; একজন মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে- তাতেই হয়তো জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তাই আসুন মানুষের পাশে থেকে, গোটা জাতির সঙ্গে একত্রিত হয়ে মানবতার বাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে বিশ্বে একযোগে শান্তি প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করি।

আরজে সাইমুর রহমান
সম্পাদক
স্বদেশ কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *