করোনার টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কিছু কমিটি কাজ শুরু করেছে। টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করা কমিটির অন্যতম প্রধান কাজ। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, টিকা পাওয়া গেলে দ্রুত টিকা দেওয়ার জন্য আগেভাগে কমিটি গঠন ও সক্রিয় করা হচ্ছে।
১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটির বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এসব কমিটিতে ১৬ জন করে সদস্যের উল্লেখ আছে। জেলা কমিটির পাঁচটি ও উপজেলা কমিটির চারটি সুনির্দিষ্ট কাজের কথা চিঠিতে উল্লেখ আছে।
টিকা আসার অপেক্ষায় সবাই। টিকা এলে প্রস্তুতির ঘাটতি থাকবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সূত্র জানিয়েছে, কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রথমটি কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি, এই কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরের কমিটি টিকা ব্যবস্থাপনা ওয়ার্কিং গ্রুপ। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় কমিটির নাম কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)।
কমিটির সদস্য
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটি করেছিল। সেসব কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বর্তমান কমিটির সদস্যের বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই বলে দুজন জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
টিকাবিষয়ক জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সদস্যসচিবের দায়িত্বে থাকবেন জেলা সিভিল সার্জন। কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জেলা সদর আসনের সাংসদ।
উপজেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর সদস্যসচিব থাকবেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা। উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
এর আগে করোনার টিকাবিষয়ক খসড়া জাতীয় পরিকল্পনাতেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করার কথা বলা আছে। সেসব কমিটির প্রধান জেলা সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাতে রাখা হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠন করা জেলা–উপজেলা পর্যায়ের কমিটিই মূল কমিটি হিসেবে কাজ করবে।
কমিটির কাজ
উপজেলা কমিটির চার দফা কাজের কথা বলা হয়েছে। প্রথম কাজ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার দেশের সব মানুষের জন্য একসঙ্গে টিকা সংগ্রহ বা কিনতে পারবে না।
যে টিকা দেশে আসবে, সরকার তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ার চিন্তা করছে। অগ্রাধিকারের এই তালিকা তৈরির কাজ জটিল হতে পারে বলে একাধিক সরকারি কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। কোন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় এই তালিকা তৈরি হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেছেন, এই সপ্তাহে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
উপজেলা কমিটির কাজের মধ্যে আছে করোনার টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ করা, টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া।
স্বাস্থ্যের বাইরে অন্যান্য বিভাগের প্রতিনিধিত্ব থাকায় টিকার কমিটির পরিধি বিস্তৃত হয়েছে, যা ব্যবস্থাপনার জন্য ভালো। তবে কমিটিগুলোর সব সদস্যকে সমান সক্রিয় থেকে কাজ করতে হবে।
আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জেলা কমিটির কর্মপরিধিতেও এই চারটি কাজের কথা বলা আছে। বাড়তি বলা আছে,
অগ্রাধিকার তালিকা তৈরিতে উপজেলা কমিটিকে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেবে জেলা কমিটি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আগের কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়নি। নতুন কমিটিকে আগের কমিটির সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘স্বাস্থ্যের বাইরে অন্যান্য বিভাগের প্রতিনিধিত্ব থাকায় টিকার কমিটির পরিধি বিস্তৃত হয়েছে, যা ব্যবস্থাপনার জন্য ভালো। তবে কমিটিগুলোর সব সদস্যকে সমান সক্রিয় থেকে কাজ করতে হবে। নিয়মিতভাবে নিজেদের কাজের পর্যালোচনা করতে হবে।