দেশে ফাগুনের আগমন। অন্যদিকে ভালোবাসা দিবসের রঙিন উৎসব। এমন দিনে প্রিয় টাইগারদের কাছে ভক্তকুলের প্রত্যাশা খুব বেশি ছিল না। মাত্র ২৩১ রান হলেই জয় আর তাতেই উৎসব হতো আরো রঙিন। কিন্তু এমন দিনে সবার হৃদয় ভাঙলো টাইগাররা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭ রানের হার বরণ করে নেয় দল। দল গুটিয়ে যায় ২১৩ রানে। হ্যাঁ, নিজেদের ভুলের মাসুলেই এই হার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
একে একে ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফেরেন বাজে শটে জীবন দিয়ে। সেই সুবাদে ২-০তে সিরিজ জিতে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অথচ জয়ের লক্ষ্যে টাইগারদের শুরুটা ছিল দারুণ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার মিলে ৫৯ রানের জুটি গড়েন। জয় থেকে তখন ১৭২ রান দূরে বাংলাদেশ দল। কিন্তু সেই জুটি ভাঙতেই যেন মড়ক লাগে টাইগারদের ইনিংসে। ১৬৩ রানে হারিয়ে ফেলে ৮ উইকেট। শেষ বিকালে মেহেদী হাসান মিরাজ একাই লড়েছেন। কিন্তু তার অবদানে শুধু মাত্র পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমেছে। হার এড়ানো যায়নি। যদিও টেস্ট ক্রিকেটে লক্ষ্য তাড়া করে বাংলাদেশের জয়ের ঘটনা মাত্র ৩টি। এর মধ্যে ২১৫ তাড়া করে জয় এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে ২০০৯ এ। দেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর পি সারা ওভালে ১৯১ রান তাড়া করে জয় এসেছিল ২০১৭-তে। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রান তারা করে জয় পায় ২০১৪-তে। আর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সিরিজে শেষ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই ২০১২-তে।
তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ক্যারিবীয়দের দারুণভাবে চেপে ধরেছিল স্বাগতিক বোলাররা। ৪১ রানে তুলে নিয়েছিল ৪ উইকেট। তাই চতুর্থ দিন বোলারদের দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। গতকাল দিনের শুরুতে বোলাররা সেই প্রত্যাশা পূরণ করেন। মাত্র ১১৭ রানে সফরকারীদের গুটিয়ে দিয়ে লক্ষ্যটা নাগালে রেখেছিল বাংলাদেশ। উইন্ডিজের শেষ চার উইকেট ভাগাভাগি করেন তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তাইজুল ফিরিয়েছেন জশুয়া ডা সিলভা ও আলজারি জোসেফকে। নাঈমের শিকার রাকিম কর্নওয়াল ও এনক্রুমা বনার। ইনিংসে ৩৬ রানে ৪ উইকেট তাইজুলের, ৩৪ রানে ৩ উইকেট নাঈমের।
এর আগে ২০১৭-তে মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে ২৪৫ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। তবে সেবার লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ১৬৭ রানে। এবার অবশ্য শেষদিকে মিরাজের ৩১ রানের সুবাদে ২১৩ রান করতে সক্ষম হয়েছে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নতুন বলে দ্রুত রান তোলার কৌশল নেন তামিম। তার দারুণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে ১৩ ইনিংস পর ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশ রানের দেখা পায় বাংলাদেশ। এই জুটি যখন মাথা ব্যথার কারণ তখন বল হাতে তুলে নেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাথওয়েট। তার প্রথম বলেই সৌম্য নিজের উইকেট উপহার দেন। কাট করার চেষ্টা করেছিলেন ব্যাট ছুঁয়ে বল কিপারের গ্লাভসে লেগে ধরা পড়ে সিøপ ফিল্ডারের হাতে।
অন্যদিকে তামিম ৯ চারে ফিফটি তুলে নেন ৪৪ বলে। আর তাতেই দায়িত্ব শেষ মনে করে ব্রাথওয়েটেরই একবারে সাধারণ একটি বলে ড্রাইভ করে বল আকাশে উড়িয়ে শর্ট কাভারে ফিল্ডারকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করান। দু’জনের বিদায়ের পর নাজমুল হোসেন শান্ত নিজের যোগ্যতার প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন নিজেই। চা বিরতির ঠিক আগে রাকিম কর্নওয়ালের বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই তরুণ। এরপর শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল। মাঝে অধিনায়ক মুমিনুল আশা দেখান। তবে তাকে সঙ্গ দিতে এসে ১৪ রানে আউট হন মুশফিক। ভাঙে ২৩ রানের জুটি। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ১০ রানে ফিরেছেন বাজে শটে। এরপর লিটনকে সঙ্গে নিয়ে ৩৩ রানের আশা জাগানিয়া জুটি গড়ে আউট মুমিনুলও। তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান। কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরের বল মারতে গিয়ে ২২ রান করা লিটনও জীবন দান করেন। শেষদিকে দিনের নির্ধারিত ওভার শেষ হয়ে গেলে ১০ ওভার অতিরিক্ত খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা।
সেই সময় মিরাজ চমক দেখাতে শুরু করেন। স্পিনার তাইজুলকে নিয়ে ১০, এরপর নাঈমকে নিয়ে ২৫ ও আবু জায়েদ রাহীর সঙ্গে ২৫ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় লজ্জা থেকে রক্ষা করেন। তবে কতক্ষণ আর একা লড়াই। তার ৫৬ বলের ইনিংসটি থামে ওয়ারিক্যানের বলে সিপ্লে রাকিম কর্নওয়ালের হাতে দারুণ ক্যাচ হয়ে। ইনিংসে ৪টি চার ও দুইটি ছক্কা হাঁকান মিরাজ।
বল হাতে ক্যারিবীয় মাউন্টেন খ্যাত কর্নওয়াল নিজের যোগ্যতার সবটা উজাড় করে তুলে নেন ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে এই ম্যাচে তার শিকার ৯টি।