অস্ট্রেলিয়ায় সংবাদসংশ্লিষ্ট কনটেন্ট নিষিদ্ধ করায় সমালোচনার ঝড়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। অস্ট্রেলিয়ার সরকারের একটি সম্ভাব্য আইন নিয়ে মতদ্বৈততার জেরে এই সিদ্ধান্ত নেয় ফেসবুক। ওই আইন পাশ হলে, ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো সংবাদ প্রকাশকদের লাভ্যাংশ দিতে হবে। ফেসবুক বলছে, তাদের সঙ্গে প্রকাশকদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভুল্ভাবে নিচ্ছেন আইনপ্রণেতারা। অপরদিকে বেশ কয়েকটি দেশের রাজনীতিবিদ, সংবাদ প্রকাশক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ফেসবুক তর্জনগর্জনের পথ বেছে নিয়েছে। পাশাপাশি, মানুষের তথ্যে প্রবেশাধিকার সম্পর্কেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ফেসবুকের নতুন নিয়ম অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীরা কোনো ধরণের স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক সংবাদের লিংক ফেসবুকে দেখতে বা শেয়ার করতে পারবে না। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ প্রকাশকরাও তাদের পেইজে নিজেদের কোনো সংবাদের লিঙ্ক পোস্ট করতে পারবে না।
এই ঘটনায় ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়াকে ‘আনফ্রেন্ড’ করার যেই সিদ্ধান্ত ফেসবুক নিয়েছে, তা যতটা অহংকারিসুলভ, ততটাই হতাশাজনক।
তিনি বলেন, তিনি এই ইস্যুতে অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফেসবুকের এই আচরণে তারা ভীত নন।
ফেসবুকের এই আচরণের বিষয়ে ইতিমধ্যেই মরিসন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে কথা বলেছেন। এ খবর দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শীর্ষ সংবাদ প্রকাশক বা পত্রিকা সিডনি মর্নিং হেরাল্ড। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অর্থমন্ত্রী জোস ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, সংবাদ নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তে কম্যুনিটির ওপর নিদারুণ প্রভাব ফেলবে।
প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ফেসবুক ব্যবহার করেন। দেশটিতে সংবাদের জন্য ফেসবুকের ওপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেন নাগরিকরা।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্ক ম্যাকগোয়ান বলেছেন, ফেসবুক যেন ‘উত্তর কোরিয়ার একনায়কে’র মতো আচরণ করছে। অন্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করায় ভুল তথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্ব আরও বেশি হারে ছড়াবে ফেসবুকে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অস্ট্রেলিয়া পরিচালক বলেন, ফেসবুক অবাধ তথ্য প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আরেক বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, একটি বেসরকারি কোম্পানি মানুষের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে—এই বিষয়টি উদ্বেগজনক।
অস্ট্রেলিয়ার বাইরে বৃটেনের গণমাধ্যম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান জুলিয়ান নাইট ফেসবুকের এই আচরণকে ‘বুলিয়িং’-এর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি মারাত্মক দায়িত্বহীন কাজ, বিশেষ করে আমরা যখন কভিড টিকা নিয়ে ভয়াবহ ভুল তথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্বের মুখোমুখি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিষয় নয়। ফেসবুক যেন পুরো বিশ্বকে বলছে যে, যদি তোমরা আমাদের ক্ষমতকে খর্ব করতে চাও, আমরা তাহলে মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনকেই সরিয়ে দিতে পারি।’
বিশ্বব্যাপী সংবাদ প্রকাশকরাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা বলছে, ফেসবুকের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জার্মানির সংবাদ প্রকাশকদের সংস্থা বলেছে, সময় এসেছে বিশ্বের সকল সরকার মিলে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর বাজার-ক্ষমতা সীমিত করার।