বেল পুষ্টিকর ও উপকারী ফল। কাঁচা পাকা অবস্থায় খেলে সমান উপকারী। কাঁচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশয় রােগে উপকারী। পাকা বেলের শরবত সুস্বাদু। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের মতাে মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। বেলকে বলা হয় শ্রীফল, কারণ হিন্দুদের পূজা অর্চনায় বেলের পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয়। হিন্দুরা বেল কাঠও পবিত্র জ্ঞান করে বিধায় কখনও বেল কাঠ পুড়িয়ে রান্না করে না।
প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশের সর্বত্র বেল জন্মালেও রাজশাহী, কুষ্টিয়া জেলায় বেল গাছ বেশি দেখা যায়। রাজশাহী ও গাজীপুরে বড় আকারের ফল বিশিষ্ট গাছও জন্মায়। ব্যবহার্য অংশ- ফুল, ফল, পাতা, শিকড়, ছাল ও মূল।
লােকজ ব্যবহার ও কার্যকারিতা: বেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আইবিএস নিরাময়ে বেলের কার্যকারিতা প্রমাণিত। আমাশয়, পাতলা পায়খানা সারাতে বেল হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। পায়খানার সাথে রক্তপড়া ও পাইল্স ভালো করতে বেল কার্যকর। গ্যাস্ট্রিক আলসার ও ডিওডেনাল আলসার ভাল করে। বেল পাতার রস জ্বর নিরাময় করে। বেল বাংলাদেশের ওষধি উদ্ভিদের পরিচিতি প্যানক্রিয়াসের উপর কাজ করে ইনসুলিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিস প্রতিরােধ করে।
চাষাবাদ পদ্ধতি: বাগানে পরিমাণ মতো বেলের চাষ করতে হবে। একটি চারা হতে অপর চারার দূরত্ব হবে ১০ মিটার। নির্ধারিত দূরত্বে ৫০ সেমি চওড়া ও ৫০ সেমি গভীর গর্ত করে প্রতি গর্তে ১০ কেজি পচা গােবর বা আবর্জনা পচা সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্তটি পুনরায় ভরাট করতে হবে। সার মিশানাে মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে ৮-১০ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে চারা রােপণ করতে হবে। চারা লাগানাের পর বর্ষা না হলে চারার গােড়ায় পানি সেচ দিয়ে গর্তের মাটি ভালাে করে ভিজিয়ে বীজসংগ্রহ ও আগাম জাতের ফল ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেও পাকে। আবার কোনাে কোনাে ফল জুন-জুলাই মাসেও পাকতে দেখা যায়। মাটিতে পড়ে ফেটে গেলে শাঁসে দ্রুত পচন ধরে। তাই সম্পূর্ণ পাকার পর মাটিতে না ফেলে একটি একটি করে বোঁটাসহ ফল সংগ্রহ করা উচিত।
অন্যান্য পরিচর্যা: ঝড় বা বাতাসে চারা হেলে বা পড়ে না যায় সেজন্য গােড়া থেকে ১০-১৫ সেমি দূরে একটি শক্ত কাঠি পুঁতে তাঁর সাথে চারা বেঁধে দিতে হবে। কোনো কারণে যদি চারা নষ্ট হয় কিংবা মারা যায় যত শীঘ্রই সম্ভব সে স্থানে নতুন করে চারা লাগাতে হবে। চারার গােড়ায় যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। চারা অবস্থায় ১-২ মিটারের মধ্যে গজানাে ডালপালা হেঁটে দিলে কাঠামাে ঠিক থাকে।
রােগবালাই ও অন্যান্য সমস্যা: বেল গাছে সচরাচর মাইট পােকা দেখা যায়। এ পােকার আক্রমণে পাতার উপর চকচকে দাগ দেখা যায়, পাতা কুঁকড়ে বা মুড়িয়ে যায়। অনুমােদিত কীটনাশক ব্যবহার করে এ পােকা দমন করতে হবে। এছাড়া বেল গাছে তেমন মারাত্মক কোনাে রােগ ও পােকা দেখা যায় না । সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ও বীজ হতে রােপণকৃত গাছে ফল আসতে ৬-৭ বছর সময় লাগে। আর কলমের গাছে ৫-৬ বছরের মধ্যে ফল আসে। গাছের বয়স ১০ বছর না হলে ভালাে ফলন হয় না। ফুল ধরার সময় হতে ফল পাকতে এক বছর সময় লাগে। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং পরের বছর ফেব্রুয়ারী-এপ্রিল মাসে ফল পাকে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে বছরে ১৫০-২০০টি বেল পাওয়া যায়। ফল সংগ্রহ করার পর গাছের পাতা সংগ্রহ অথবা ঝরা পাতা ও সংগ্রহ করে রােদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়।