সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে ভারতে করোনাভাইরাসের কারণে মৃত্যুসংখ্যা ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি হতে পারে। এই বছরের শুরুর দিকে, করোনার বিপর্যয়কর দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। হাসপাতালগুলোতে রোগী ছিল উপচে পড়া এবং অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়েও অনেক রিপোর্ট হয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট এসব কথা বলেছে।
বিজনেজ ইনসাইডার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়- ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ৪১১,০০০ এর কিছু বেশি লোক করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে সরকারি চিত্রটি সত্যিকারের মৃত্যুসংখ্যার একটি সামান্য অংশ মাত্র। আমেরিকার ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফার লেফ্লারের একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রকে উদ্ধৃত করে দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে করোনায় ১৮ লাখ থেকে ২৪ লাখ মানুষ মারা গেছেন।
এটা যদি সত্য হয়, তবে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি ঘটনা ভারতেই ঘটেছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে সর্বাধিক মৃত্যু রেকর্ড করা রয়েছে, যা ৬ লাখের বেশি।
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের বীমা দাবির ওপর ভিত্তি করে করা আরেকটি গবেষণার বরাতে দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের মৃত্যুসংখ্যার চেয়ে ছয়গুণ বেশি হতে পারে।
ভারত সরকার অবশ্য এই প্রতিবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে যে, এগুলো বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে করা হয়নি।
সিভোটার পোলিং গ্রুপের চেয়ারপারসন যশবন্ত দেশমুখ দ্য ইকোনমিস্টকে বলেছেন, বিভ্রান্তিকর সরকারি পরিসংখ্যানগুলোতে “কোন কিছুর অভাব ছিল না, অভাব ছিল ইচ্ছার। এটি কেন্দ্রীয় সরকার বা কোনও বিশেষ দলের বিষয় নয়। প্রত্যেক স্তরেই সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি, দায়িত্বে যেই থাকুক না কেন।”
ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের মতে, ভারত সরকার করোনায় মৃত্যুর ঘটনা যেভাবে রেকর্ড করেছে তা প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যাকে অস্পষ্ট করেছে।
ম্যাগাজিনটির মতে, প্রথম সমস্যাটি হল মহামারীর আগেই ভারতের মৃত্যু নিবন্ধন ব্যবস্থায় মৃত্যুর রিপোর্ট কম করা হতো। এর আংশিক কারণ অনেক ভারতীয় মারা যাওয়ার আগে চিকিৎসা করান না এবং অনেকের মৃত্যুর খবর চিকিৎসক দ্বারা সত্যায়িত করা হয় না।
তবে, মৃত্যু নিবন্ধনে কিছু সমস্যা নির্দিষ্টভাবে এই মহামারী সম্পর্কিত। ভারতের সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা না করে মারা যান বা পরীক্ষা করে নেগেটিভ হন তবে তাদের মৃত্যুকে “সন্দেহজনক বা সম্ভাব্য করোনায় মৃত্যু” হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত।
কিন্তু, ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের কর্মকর্তারা ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনকে বলেছেন, যেসব ব্যক্তি ভাইরাসের পরীক্ষায় পজিটিভ ছিলেন এবং তারপর স্পষ্ট অসুখ বেড়ে গিয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন তাদেরকেই সরকারিভাবে করোনায় মৃত্যু হিসেবে গণনা করা হয়েছে।
ম্যাগাজিনটি আরও বলছে, ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যেই “ডেথ অডিট কমিটি” গঠন করা হয়েছে, যারা মৃত্যুর প্রশংসাপত্রগুলো পরীক্ষা করে নির্ধারণ করেন যে কোনটিকে করোনায় মৃত্যু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমরবিডিটিযুক্ত (গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি) লোকজনের মৃত্যুর কারণ করোনায় মৃত্যু না দেখানোর জন্য তাদের অনেক শর্তও দায়ী।