এ ঘটনায় প্রথমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০(সংশোধনী/০৩) এর ৭/৩০ ধারায় খিলগাঁও থানায় অপহরণ এর অভিযোগে মামলা করে শিশুটির বাবা আব্দুল মালেক। পরে আসামি সেলিমকে (৩২) গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। একইসাথে ওই মামলাটি পেনাল কোড ৩০২/২০১ ধারা সংযোজন করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
আসামি সেলিম পেশায় একজন রিক্সা চালক। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার লেসপ্রতাপ বয়াতিবাড়ি গ্রামে। তিনি স্ত্রীসহ রাজধানীর সবুজবাগ থানার শান্তিপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। মূলত অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতেই তিনি পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাটি করেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগ উপ-পুলিশ কমিশনার আ. আহাদ পিপিএম-বার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মামলার বাদী মো আব্দুল মালেক (৩৩) খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া এলাকার নুর মসজিদ এলাকায় বসবাস করছেন। গত ৬ আগস্ট দুপুর তিনটার দিকে তার ছেলে জিসানুল ইসলাম আকাইদ বাসার সামনে পাঁচ থেকে ছয়জন বাচ্চার একসাথে খেলতে যায়।
অন্য বাচ্চারা খেলা শেষে তাদের বাসায় ফিরে গেলেও আকাইদ বাসায় ফিরেনি। পরে বিকেলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। ওইদিন রাতেই বিষয়টি নিয়ে খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আকাইদের পিতা আব্দুল মালেক।
এরইমধ্যে স্থানীয় এবং আশেপাশের লোকজনের মাধ্যমে মালেক জানতে পারে, তার ছেলেকে অজ্ঞাতনামা এক রিক্সার চালক তার রিক্সাতে করে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে নুর মসজিদের দিকে নিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ।
ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অজ্ঞাতনামা রিক্সা চালক অপহৃত শিশুটিকে রিক্সাযোগে নিয়ে যায়। পরে, সোমবার (৯ আগস্ট) পুলিশ জানতে পারে নূর মসজিদ গলি এলাকার ৫ম তলা ভবনের ২য় তলায় একটি বাচ্চার মৃতদেহ পড়ে আছে। সেখানে পড়ে থাকা শিশুর লাশ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, এটি আকাইদের হতে পারে।
পরবর্তীতে মৃত বাচ্চার লাশ শনাক্ত করার জন্য আব্দুল মালেককে খবর দিলে তিনিসহ তার স্ত্রী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃত বাচ্চাটি তার অপহৃত ছেলে জিসানুল ইসলাম আকাইদ বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেন। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এরপরই খিলগাঁও থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মো. সেলিমকে (৩২) আটক করে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।
প্রাথমিকভাবে সে জানায়, তিনি পেশায় একজন রিক্সা চালক। তার স্ত্রী নুপুর আক্তার দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়াও তার পেটের ভিতরে টিউমারের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু ওই রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তাই সে বাড়ির মালিক বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা চাইলেও মোটা অংকের টাকা সে পায়নি। এতে সে কোনো অবৈধ জিনিস ওই বাড়িতে রেখে চাপ দিয়ে বেশি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করে।
সে চিন্তা থেকেই একটি ক্ষুর কিনে নিজের কাছে রেখে দেয় সেলিম। ঘটনার দিন বিকেল চারটার দিকে রিক্সা নিয়ে মধ্য নন্দীপাড়া ২নং রোডে যায়। সেখানে জিসানুলকে তার রিক্সাতে করে নুর মসজিদের দিকে নিয়ে যায় এবং পরে তাকে বাবুলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় নিয়ে গিয়ে সেখানে থাকা রশি দিয়ে জিসানুল এর দুই হাত বেঁধে ধারালো ক্ষুর দিয়ে তার গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
তার পরিকল্পনা ছিল, যেহেতু বাবুল তাকে বলেছিল ৭ আগস্ট বাসা পরিষ্কার করতে হবে। তখন তার বাড়ি পরিষ্কার করার সময় এই লাশ দেখতে পেলে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে লাশটি বাড়ি থেকে সরানোর চিন্তা করবে। এক্ষেত্রে বাবুল তাকে দিয়ে লাশটি সরানোর উদ্যোগ নিলে সে লাশ সরানোর কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করবে। কিন্তু তিন দিন পার হলেও বাবুল তাকে বাড়ি পরিষ্কার করার কাজের জন্য না ডাকায় এবং লাশের কোনো প্রকার খোঁজ না পাওয়ায় তার এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
পরে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বাবুলের বাড়ি থেকে পঁচা দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করলে একপর্যায়ে সবাই দ্বিতীয় তলায় একটি শিশুর পঁচাগলা মৃতদেহ দেখতে পায়। পরে পুলিশ অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিক্সা, অপরহণের সময় অপহরণকারীর পরিহিত টি-শার্ট ও লুঙ্গি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর জব্দ করে।