নিজেকে আমাজনের ‘বাংলাদেশি সংস্করণ’ এর প্রতিষ্ঠাতা দাবি করা আমান উল্লাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবিশেষের কাছে অভিযোগ করে আসছিলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অনেককেই ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন তিনি।
গেল বছরের আগস্টে প্রথমবার বেশ আলোচনায় উঠে আসেন আমান উল্লাহ। প্রথমে বাংলাদেশেই যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজন-এর আদলে একটি ওয়েবসাইট খুলে বসেন। ‘আমাজন ডট কম ডট বিডি’ নাম দিয়ে বানানো সেই ওয়েবসাইটে আমাজনের লোগো ও লোগো সদৃশ ছবি ব্যবহার করেছেন। দেশীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পরবর্তীতে ‘আমাজন বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি ই-অরেঞ্জ নামে একটি দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি প্রতারণার মামলা হলে ফেঁসে যান সেই আমান উল্লাহ। প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার ৩ নম্বর আসামি হিসেবে বুধবার (১৯ আগস্ট) গুলশান এলাকা থেকে আমান উল্লাহকে গ্রেফতার করেন গুলশান থানা পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে ২৬টি ক্রেডিট কার্ড, নগদ ১৬ লক্ষ টাকা এবং একটি বিলাসবহুল গাড়ি পাওয়া যায় বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়।
তবে ভুয়া আমাজন চালু আর ই-কমার্সের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাতের আরও আগে থেকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ এর ব্যবসা করে আসছিলেন বলে অভিযোগ আছে আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এমনই একটি দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী একজন উদ্যোক্তা বলেন, ২০২০ সালের শুরু থেকেই এই আমান উল্লাহ আমাকে বিরক্ত করে আসছিলেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নাকি আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন আর সেই অভিযোগের কারণে নাকি আমাদের প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দেবেন। প্রথমে ভালোভাবে তাকে বুঝিয়েছি কিন্তু পরে তার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারি। অভিযোগ উঠিয়ে নেওয়ার বিনিময়ে সে একটি গাড়ি চেয়েছিল। তখন সে প্রতারক বুঝতে পেরে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। তবে বেশ কয়েকজন পরিচিতজন আমাকে জানান যে, আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
২০২০ সালের আগস্টে এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো সংস্থার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলে খোদ এই প্রতিবেদককে অবগত করেছিলেন আমান উল্লাহ।
অভিযোগ জমা দেওয়ার সত্যতা জানতে চাইলে প্রতিবেদকের হোয়াটস অ্যাপে কিছু ডকুমেন্ট পাঠান আমান উল্লাহ। সেসব অভিযোগে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন কে বাংলাদেশে চালু করতে যাওয়া’ ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেন।
প্রায় সমসায়িক সময়ে এই আমান উল্লাহ এবং তার প্রতিষ্ঠান ‘আমাজন বাংলাদেশ’ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছিল ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব। সংগঠনটির পরিচালক ও ব্রেক বাইট ই-বিজনেসের প্রতিষ্ঠাতা আসিফ আহনাফ বাংলানিউজকে বলেন, সেসময়েই আমরা এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছিলাম। যেহেতু তার বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ তখনও আমরা পাইনি তাই কোনো ব্যবস্থা নেইনি। তবে আমাজন বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত ই-কমার্স জায়ান্ট। তাদের নাম ব্যবহার করে, তাদের মতো করে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই করা হয়ে থাকতে পারে। এরজন্য আমরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও অনুরোধ করেছিলাম বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে। বিষয়টি আপনিও জানেন সেসময় আমরা সবাইকে সতর্ক করেছিলাম।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জ এর সাবেক ও বর্তমান মালিকপক্ষ এবং একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণার মামলা দায়ের করেন এক ভুক্তভোগী। গ্রাহক ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া বিপুল অংকের এই টাকা আসামিরা আত্মসাৎ বা অন্য কোথাও পাচার করেছে কিনা সে বিষয়টিও আগের মামলার সঙ্গে খতিয়ে দেখছে আইনশৃংখলা বাহিনী।