জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার হওয়ার পর এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলমকে সিটি মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের কথা জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র গঠন করার কথা জানায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পিআরও হায়দার আলী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র গঠন করা হয়েছে।
মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বরখাস্তের বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ আছে। এরমধ্যে সরকারি সম্পদের অপব্যবহার, জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করা, জায়গা দখণ, অর্থ আত্মসাত, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ আছে। সেগুলো তদন্তের স্বার্থে এখন বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আইন অনুযায়ী কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি/মেয়রের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ উঠে এবং তদন্তের নিষ্পত্তির জন্য আমলে নেওয়া হয় তাহলে আইনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম আছে।
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন কবে দেওয়া হবে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমার তার (জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের নথি আমলে নিয়েছি। ইতোমধ্যেই তদন্ত আরম্ভ হয়েছে। কত দিন লাগতে পারে সেটি এখন বলা মুশকিল। তদন্তে নতুন অনেক কিছু যুক্ত হতে পারে।
ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তাজুল ইসলাম।
২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর। বঙ্গবন্ধু ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের রেকর্ড ফাঁস হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ঘরোয়া আলোচনার রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের একটি অংশ মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে।
এরপর গত ৩ অক্টোবর মেয়র জাহাঙ্গীরের ব্যাখ্যা চায় আওয়ামী লীগ। এতে তাকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মেয়র তার ব্যাখ্যা দেন।
পরে গত ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দল থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সভায় উপস্থিত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক একটি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে।’