চার সোনার দোকানে চুরি করেছে একই চক্র

ভুয়া পরিচয়ে মার্কেটে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি নিয়ে সেখানকার সোনার দোকানে (জুয়েলারি দোকান) বড় ধরনের চুরি করতে সাত সদস্যের দল গড়েন ফ্রান্সপ্রবাসী নাসির হোসেন। এই দলের সমন্বয়ক তাঁর শ্যালক মঞ্জুর হাসান শামীম। দলটি শুধু রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার রজনীগন্ধা মার্কেটের রাঙাপরী জুয়েলার্সের দুটি সোনার দোকান নয়, গত চার বছরে চারটি বড় চুরি করেছে। এক বছর আগে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারের হোসেন মার্কেটে প্রায় ৬০০ ভরি সোনা চুরি করে একই দল।

ওই মার্কেটের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ব্যক্তিদের সঙ্গে রজনীগন্ধা মার্কেটের চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চেহারা মিলে গেছে। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তকারীরা বলছেন, হোসেন মার্কেটসহ চারটি ঘটনায় নাসির-শামীম সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছেন তারা। গ্রেপ্তারের পর ২০ ফেব্রুয়ারি শামীম ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের যাচাই করার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চক্রটি একের পর এক সোনার দোকানে চুরি করেছে।

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, রজনীগন্ধা মার্কেটে মনির নামে চাকরি নেওয়া ইলিয়াস হোসেন এবং আলম নামে চাকরি নেওয়া মাসুদই মূলত সবখানে ভুয়া পরিচয়ে চাকরি নেন। দলের কাওসার নামের এক সদস্য শাহিন মাস্টার নাম নিয়ে মার্কেটে দোকান ভাড়া নেন। চুরির সময় তালা কাটেন রাজা মিয়া। একসময় ডাকাতদলের সদস্য রাজা মিয়াকে এই বিশেষ কাজের জন্য চুরির মালের জনপ্রতি ভাগের দেড় গুণ দেওয়া হয়। আর প্রবাসী দলনেতা নাসির নেন দ্বিগুণ। চুরির সোনা একটি সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করেন শ্রীকান্ত নামের আরেক সদস্য।

 

জানতে চাইলে ডিবির মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ছদ্মপরিচয়ে চাকরি নিয়ে এরা দীর্ঘদিন ধরে সোনার দোকানে চুরি করে যাচ্ছে। তিন-চার বছরে আমরা চারটি ঘটনার তথ্য পেয়েছি। শামীম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা দলের অন্য সদস্যদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সোনা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। ’

ডিবি সূত্র জানায়, কাফরুলের ‘বেস্ট সিকিউরিটাস সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিসেস’ নামের কম্পানি থেকে দুজন ভুয়া পরিচয়ে রজনীগন্ধা মার্কেটে কাজ নেন। চাকরির তথ্য ফরমে ইলিয়াস তাঁর নাম মনির হোসেন এবং খুলনার ঠিকানা দেন। আর মাসুদ তাঁর নাম আলম ও মাদারীপুরের ঠিকানা দেন। প্রকৃতপক্ষে ইলিয়াসের বাড়ি যশোরের ঝুমঝুমপুরে। এলাকায় তিনি নিজেকে স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী বলে পরিচয় দেন। কয়েক বছর আগে গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন ইলিয়াস। দলের সমন্বয়ক শামীমের চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন তিনি। তার মাধ্যমেই সোনা চুরির দলে নাম লেখান। শামীম ফ্রান্সপ্রবাসী নাসিরের শ্যালক। এ কারণে দলে বিশ্বস্ত সদস্য হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে চাকরি নেওয়ার কাজটি করতেন ইলিয়াস।

ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, আলম পরিচয়ে চাকরি নেওয়া মাসুদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরে। এই দলে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়মিত চাকরি নেন মাসুদ। এরপর সুযোগ বুঝে দল নিয়ে চুরি করেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তালাভাঙা রাজা মিয়ার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের হাসারা এলাকায়।

কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা মার্কেটে শাহিন মাস্টার নামে দোকান ভাড়া নেওয়া ব্যক্তির প্রকৃত নাম কাওসার। বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে। দলে তার কাজ হচ্ছে চুরির আগে ওই মার্কেটে দোকান ভাড়া বা কোনো কাজে ভদ্রবেশে ঢুকে পড়া। এরপর চুরিতে সহায়তা করা।

দলনেতা নাসির প্রায় সাত বছর আগে ফ্রান্সে গেলেও দেশে তিনি অপরাধে জড়িত ছিলেন। বাগেরহাটে নাসিরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি চুরির মামলা আছে। বিদেশে বসে শামীমের মাধ্যমে সিন্ডিকেট চালানোর কারণে পরিবারেও সমস্যা হয়। তার শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ শামীমের বাড়ি বরিশালের বিমানবন্দর এলাকায়। অপরাধে জড়িত থাকায় স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ করেন।

ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, দলটি গত বছর ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারের হোসেন মার্কেটে ৬০০ ভরি সোনা চুরি ছাড়াও তিন বছর আগে সিদ্ধিরগঞ্জে আরেকটি বড় চুরি করে। কয়েক মাস আগে রাজধানীর পল্টনে চায়না মার্কেটে চুরির প্রস্তুতি নিলেও একটি বাইসাইকেল চুরি নিয়ে ঝামেলায় পড়ে তারা সেখান থেকে কচুক্ষেতে চলে যায়।

ডিবির ডেমরা জোনাল টিমের এডিসি আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হোসেন মার্কেটের তৃতীয় তলায় সোনার দোকানে এরাই চুরি করেছে। কচুক্ষেতের সিসিটিভি ফুটেজ ও এখানকার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একই লোক দেখা গেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *