বরিশালে ১০ তলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের লিফটে আটকা পড়ে আইনজীবী, পুলিশ সদস্য এবং বিচার প্রার্থীসহ ১০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে গুরুতর দুই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এক মাস আগে গত ৩ মার্চ ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।
অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যক্তিরা হলেন— আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস, আজিজুর রহমান রিয়াজ, জাফরুন্নেছা রোজী ও মনিরুল ইসলাম মনির এবং এসআই জসিম উদ্দিন ও কনস্টেবল কুলসুমসহ ১০ জন।
জেলা পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এসআই জসিম উদ্দিন বলেন, ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে যাওয়ার জন্য আইনজীবী, পুলিশ এবং বিচার প্রার্থীসহ ১২ জন লিফটে ওঠার পর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর লিফট কোনোভাবেই উপরে উঠছিল না। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আটকে থাকায় অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। এ সময় লিফটের ভিতর এবং বাহির থেকে দরজা খোলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ইট দিয়ে পিটিয়ে দরজা খোলা হয়। এরই মধ্যে অক্সিজেনের অভাবে লিফটের ভিতরে থাকা ১০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন।
লিফট থেকে বের হওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলা আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস বলেন, এক সময় মনে হচ্ছিল সবাই মারা যাচ্ছি। সবাই হাউমাউ করে কাঁদছিল। কেউ কেউ লিফটের দরজা ভাঙার চেষ্টায় ছিলেন। কোনোভাবেই লিফটের দরজা খোলা যাচ্ছিল না। এভাবে আধাঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে যায়। এতে অক্সিজেনের অভাবে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিফটের ভিতরে মোবাইলেও কাজ করছিল না। এ কারণে কারো সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে বাহির থেকে আইনজীবী বাচ্চুসহ বিচারপ্রার্থীরা ইট দিয়ে দরজায় আঘাত করতে থাকায় কিছুটা ফাঁক হয়। এরপর লিফটের ভিতরে থাকা সবাই উদ্ধার হয়েছে।
উদ্ধারে সহায়তাকারী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোখলেচুর রহমান বাচ্চু বলেন, আদালত ভবনটি উদ্বোধনের পর থেকে লিফটে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মাঝে মধ্যে লিফট অচল হয়ে থাকে। আবার কোনো সময় কিছুদূর ওঠার পর থেমে যায়। বিচিত্র রকম সমস্যার কারণে ১০তলা ভবনে উঠানামায় বেগ পেতে হয়। আর আইনজীবী, পুলিশ ও বিচার প্রার্থীদের জন্য লিফট মাত্র ২টি। তাতে ধারণক্ষমতা ১০ থেকে ১২ জন। তাও ঠিকমতো তুলতে পারে না লিফট। এর মধ্যে লিফটে অক্সিজেনের কোনো জায়গা নেই।
আইনজীবী আতিকুর রহমান জুয়েল বলেন, নিম্নমানের লিফটের সঙ্গে সঙ্গে এটি ব্যবহারে কোনো লোক দেওয়া হয়নি। সমস্যা হলে কাউকে বলার কোনো স্থান নেই। আজ যে ধরনের বিপদ হয়েছিল তা থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। ভবনের ধারণক্ষমতার চেয়ে লিফটের সংখ্যাও অনেক কম। যে দুটি লিফট আইনজীবী, পুলিশ ও বিচারপ্রার্থীরা ব্যবহার করতে পারে তার ধারণক্ষমতা মাত্র ১০ থেকে ১২ জন। কিন্তু প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে ২০-২২ জন ধারণক্ষমতার লিফট। এজন্য নিচতলা থেকে প্রতিটি ফ্লোরে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।
নাজির তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর দৌড়ে ১১তলা যাই। সেখানে গিয়ে লিফটের পাওয়ার সুইচ বন্ধ করে আবার চালু করি। এরপর দরজা খুলে যায়। তার ধারণা স্ফুটওয়ারের কারণে হ্যাং হয়ে গিয়েছিল। রিস্টার্ট দেওয়ার পর আবার চালু হয়।
এদিকে ঘটনার পর দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলা জজ রফিকুল ইসলাম ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহিবুল ইসলাম। সেখানে লিফটম্যান দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে লিফটের সমস্যা গণপূর্ত বিভাগকে অবহিত করে দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি লস্কর নুরুল হক বলেন, আমার ধারণা পুরনো লিফট দেওয়া হয়েছে। তা না হলে উদ্বোধনের পরপরই এত সমস্যা দেখা দেবে কেন। আজ যে ঘটনা ঘটেছিল তার আরেকটু দীর্ঘ হলে কয়েকটি লাশ দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বিষয়টি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হবে এর একটা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য।
উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ ৪৯ কোটি ১৭ লাখ টাকায় নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন করা হয়।