নেত্রকোনার খালিয়াজুরী হাওরাঞ্চলের চাকুয়া ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে সেতুর ওপর তৈরি ঘরটি অপসারণ করা হয়েছে। ছয় বছর আগে নির্মাণ করা সেতুতে এপ্রোচ সড়ক না থাকায় নির্মাণের পর থেকে সেতু দিয়ে কোনো যানবহন চলাচল করেনি, এমনকি হেঁটে পার হতে পারেনি কেউ।
এ নিয়ে গত ৭ মে ‘সেতুর ওপর বসতঘর’ শিরোনামে যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমানের নির্দেশে সোমবার বিকালে ঘরটি সরিয়ে নেয় ফিশারীর লোকজন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া বাজার থেকে ফরিদপুর হয়ে জগন্নাথপুর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার মাটির ডুবো সড়ক রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক দিয়ে শুকনা মৌসুমে প্রতিদিন লেপসিয়া, ফতুয়া, ফরিদপুর, রাশিদপুর, চাকুয়া, জগন্নাথপুরসহ আশপাশের অন্তত ১২টি গ্রামের প্রায় আট হাজার মানুষ চলাচল করে।
গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সড়কের ফরিদপুর এলাকায় জলমহালসংলগ্ন খালের ওপর একটি উঁচু পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করে। কিন্তু সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণের পর থেকে সেতুটির ওপর দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে কাজে আসেনি। গত চার বছর ধরে সেতুর ওপর দুই তৃতীয়াংশ জুড়ে একটি টিনের ঘর তৈরি করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফরিদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নেওয়া জলমহালের লোকজন ওই ঘরটি তৈরি করে ব্যবহার করছে।
ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস মিয়া, রইস উদ্দিন বলেন, সেতুটি নির্মাণের পর থেকে মানুষ চলাচলের কাজে না আসলেও ঘর বেঁধে জলমহালের লোকজন বসবাস করে পাহারার কাজে ব্যবহার করতো। সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ করে সেতুটি কোনো কাজে আসছিল না। ঘরটি অপসারণ করায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংযোগ সড়কসহ মাটির সড়কটি উঁচুসহ পাকা করার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আবু সিদ্দিক ও সদস্য মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘সেতুটি বানানোর পর থেকে অকেজো হিসেবে পড়ে থাকায় আমরা কয়েক বছর আগে ঘর বানিয়ে পাহারার কাজে লাগাচ্ছিলাম। এখন প্রশাসনের নির্দেশে আমরা ঘর সরিয়ে নিয়েছি।’
এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়াসিন খন্দকার নিজের নেতৃত্বে কালভার্টটিতে অভিযান পরিচালনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, দখলকারীরা ঘরটি ভেঙে নিয়ে পালিয়েছে। তাই অভিযুক্তদের ধরা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে যুগান্তর সহ কয়েকটি মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর তা নজরে এসেছে। ঘরটি সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দখলদারদের বিরুদ্ধে আহনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।