ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি উপজেলার বাগানে বাগানে লিচু গাছে ব্যাপকহারে গুটি এসেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি বছরই লিচু বাগানের বিস্তার ঘটেছে। ক্রমেই চাষিরা লিচু চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছে। লিচু চাষিরা এখন লিচু বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত।
এবার বাম্পার ফলনের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন চাষিরা। বিভিন্ন বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে গুটি লিচু।কিছু লাল হতে শুরু করেছে তাই বাজারে আসতে শুরু করেছে আগাম জাতের লিচু। এবার গুটি লিচুতে স্বপ্ন বুনছে বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবার লিচু বাগানের মালিকেরা।
বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, সেজামুড়া, খাটিঙ্গা, অলিপুর, কচুয়ামোড়া, ছতুরপুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, শান্তামোড়া, কামালপুর এলাকায় প্রায় ৬ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। আখাউড়া উপজেলার আজিমপুর, চাঁনপুর, রাজাপুর, হিরাপুর, টনকি, মিনারপুর, আনোয়ারপুর ও কল্যাণপুর গ্রামেও রয়েছে অনেক বাগান।
এসব বাগানে দেশী লিচু, বোম্বাই, চায়না-২,চায়না-৩ ও পাটনাই জাতের লিচু চাষ করা হয়। মে মাসের শেষে ও জুনের প্রথম সপ্তাহে গাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করা যাবে। তবে পাটনাই জাতের লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরে কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৯টি উপজেলার ৫২৯ হেক্টর জমিতে ৯২০টি লিচু বাগান আছে। বেশির ভাগ লিচু বাগানই বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় রয়েছে তবে অন্য উপজেলায় তেমন লিচু বাগান না থাকলেও বসত বাড়িতে লিচু গাছ আছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে গতবারের চেয়ে এ বছর ভালো লিচু ফলন হবে আশা করি। জেলায় গত বছর প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন লিচু উৎপাদন হয়, এই বছর ২ হাজারে ৬৪৫ টন লিচুর ফলন আশা করা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি কর্মচারী আছেন। তারা প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে লিচু বাগান পরিদর্শন করছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিজয়নগর উপজেলার সেজামোড়া এলাকার লিচুচাষি শরিফ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে ৬৫০টি বিভিন্ন জাতের লিচু গাছ আছে। এ বছর প্রতিটি গাছে গাছে বেশ ভালো লিচু ধরেছে। ফলে লিচুর ভালো ফলন হতে পারে। গত বছর প্রায় ১৭ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছি। এই বছর ফলন ভালো হওয়ায় ২০-২৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
আখাউড়া উপজেলার চানপুর গ্রামের লিচুচাষি কায়কোবাদ বলেন, আমার ৫টি বাগানে ২৫০ লিচু গাছ আছে গত বছর থেকে এবার গাছে ফল ভালো দেখা যাচ্ছে ঝড় তুফানে ক্ষতি না হলে ভালোই লাভবান হতে পারব বলে আশা করি।
গতবছর খরচ বাদে ভালোই লাভ হয়েছে। তবে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারো গত বছর থেকে ভালো লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিজয়নগর কৃষি কর্মকর্তা মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, উপজেলায় এ বছর ৪১৪ হেক্টর জমিতে ৬২২টি লিচু বাগান রয়েছে। এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বোম্বাই জাতের লিচু ২৯০ হেক্টর, পাটনাই ১১০ হেক্টর চায়না-২, চায়না-৩ জাতের ১৪ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চাষিরা পাটনাই জাতের লিচু বিক্রি করতে শুরু করেছে। তবে সব জাতের লিচু বাজারে আসবে এই মাসের শেষের দিকে। অন্য বছরের চেয়ে এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা আক্তার বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে আধপাকা গুটি লিচু। এ বছর উপজেলায় ৭৫ হেক্টর জমিসহ বসতবাড়িতে লিচুগাছ রয়েছে। গত বছর ৩৪০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে ভালো লিচু ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।