পুকুরে-জলাশয়ে ভেজানো সুপারিতে কেমিক্যাল, স্বাস্থ্যঝুঁকি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পুকুর ও জলাশয়গুলোতে ভেজানো হচ্ছে সুপারি, মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। এতে ধ্বংস হচ্ছে জলজপ্রাণী। হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।

সিভিল সার্জন ও প্রশাসনের তদারকি ও ভ্রাম্যমাণ অভিযান জোরদার না থাকায় একটি অসাধু প্রভাবশালী চক্র এসব করে আসছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুরে প্রধান অর্থকরী ফসল সুপারি। এবার প্রায় ১৪ হাজার টন সুপারির ফলন হয়েছে জেলায়।

যার বাজারমূল্য সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। এখানে উৎপাদিত সুপারি কেউ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন, আবার অনেকে নদী-নালা, সংযোগ খাল, ডোবা-পুকুরে ভিজিয়ে পরে বিক্রি করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন পুকুর- ডোবা-নালায় পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে সুপারি। বর্তমানে ৪০-৫০ ভাগ সুপারি বিভিন্ন স্থানে জলাশয়গুলোতে ভেজানো রয়েছে।

সুপারির কাঁচা স্বাদ ধরে রাখতে নির্দিষ্ট পাকা হাউসে ভেজানোর নিয়ম থাকলেও বেশি লাভের আশায় তা মানছেন না ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা।

সুপারিতে কেমিক্যাল, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

স্থানীয়রা জানান, উন্মুক্ত জলাশয়ে সুপারি ভেজানোর ফলে পানি ব্যবহার করতে পারছেন না তারা। মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে চরমে। পাশাপাশি পঁচা সুপারির দুর্গন্ধে আশপাশে চলাচল করতে দুর্ভোগে পড়তে হয় এলাকার লোক- পথচারীদের।

রায়পুরের চরবংশী, চরআবাবিল, চরমোহনা, রাখালিয়া, বামনী, কেরোয়া, শায়েস্তানগর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সুপারিতে বিষাক্ত রঙ মেশাচ্ছেন। পানিতে দীর্ঘদিন সুপারির সংরক্ষণ করলে রঙ নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা রঙ মিশিয়ে চকচকে করে। পরে চড়া দামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় রায়পুরসহ জেলায় বিষাক্ত কেমিক্যাল ও রঙ এসব মেশানো সুপারি।

সুপারি বাগান ও মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মো. তহির বলেন, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে রায়পুরের প্রায় ২০০ কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হয়। সুপারিতে রঙ বা কার্বোরাইড না মিশালে ওই ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনেন না। এতে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। গত বছরের প্রথম দিকে জেলা সমন্বয়সভায় এ কেমিক্যাল মেশানোর জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের কাছে অনুমতি চাইলে তারা তা অনুমতি দেন। এ রঙ মানুষের জন্য ক্ষতিকারক কিনা, তা জানার জন্য দেড় বছর আগে খাদ্য অধিদপ্তরে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু আজও ওই রিপোর্ট আসেনি। আর যদি এই কেমিক্যাল আমরা না-ই ব্যবহার করতে পারি, তা হলে ওই সব অঞ্চলের সুপারি বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানাই।

এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন ইউএসএ বাংলাদেশের সভাপতি অহিদুল হক বাবলু জানান, জলজপ্রাণী ধ্বংস হওয়াসহ দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনকে জানানোর পরও উদ্যোগ না নেওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম জানান, কোনো পণ্যে বা সুপারিতে বিষাক্ত রঙ মেশানোর ফলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগসহ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. মাসুদ বলেন, রায়পুরে পুকুর ও জলাশয়গুলোতে ভেজানো হচ্ছে সুপারি, মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। এতে ধ্বংস হচ্ছে জলজপ্রাণী। ইউএনও স্যার বললে তখন অভিযান পরিচালনা হয়। না হলে আমাদের করার কিছুই নেই।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ যুগান্তরকে বলেন, পুকুর ও জলাশয়গুলোতে ভেজানো কাঁচা সুপারিতে কেমিক্যাল ব্যবহার করা জঘন্য অপরাধ ও মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকর। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *