সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে যাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের দীর্ঘ সময় ভুগতে হবে। তাদের চোখে তিন ধরনের ইনজুরি হয়েছে। প্রথমত, চোখে কেমিক্যাল পড়েছে। এতে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, চোখে কেমিক্যালের আঘাত লেগেছে। তৃতীয়ত, আঘাতের ফলে চোখের অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে। ন্যাশনাল আই কেয়ারের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক জানিয়েছেন, আঘাতের কারণে কারও কর্নিয়া, রেটিনা অথবা অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আহত ৬৩ জনের চোখ দেখে এ তথ্য জানান তিনি। তার নেতৃত্বে মঙ্গলবার ঢাকা থেকে একটি চক্ষু বিশেষজ্ঞ দল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পরিদর্শনে আসেন। এ সময় চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের ঢাকায় স্থানান্তরের কথা রয়েছে। একজন চিরতরে পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন-এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা।
চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোগীদের দেখে অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘চমেকে চিকিৎসাধীন ৬৩ জন রোগীকে একজন একজন করে দেখেছি। তারা কোনো না কোনোভাবে চোখে আঘাত পেয়েছেন। এখানে কিছু রোগী রয়েছেন তাদের চোখে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এমন ৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। আবার কিছু রোগী শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত পেয়েছেন। আমরা চাই, চোখে গুরুতর আহত ছয় রোগীকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে। কিন্তু তাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে এখনি তাদের ঢাকায় নেওয়া সম্ভব নয়। দু-একদিন পরে হয়তো তাদের অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’
চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগতে পারেন জানিয়ে এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিস্ফোরণে কয়েকজনের অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। এটি ৬ মাস বা এক বছর পর বোঝা যাবে। এজন্য তাদের প্রতি মাসে রুটিন চেকআপে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এই চক্ষু চিকিৎসক বলেন, ‘ছয়জনের মধ্যে একজনের কর্নিয়া পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রয়োজনে তাকে বিদেশ পাঠানো হবে। সব খরচ সরকার বহন করবে।’
চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন তোফাজ্জল হকের স্বজন রুস্তম আলী সৈকত বলেন, ‘আমার ভাই বিএম কনটেইনার ডিপোর আইটি বিভাগে চাকরি করতেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বাসা থেকে ডিপোতে গিয়ে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন। তিনি শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়াসহ চোখের আঘাত পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত চোখ খুলতে পারছেন না।’ জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে আহত মোট ২৩০ জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এরমধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ৭৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তুলনামূলক গুরুতর ১৫৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। বর্তমানে হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড মিলে ৬৩ জন চিকিৎসাধীন।’
শনিবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯ জনসহ সর্বশেষ ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।