অন্যদিকে বিটিআরসির বক্তব্য, বহুবার বলার পরও গ্রামীণফোন তাদের সেবা মানসম্মত করতে পারেনি। তার পরও আলোচনা হতে কোনো বাধা নেই।
বিটিআরসি ও গ্রামীণফোন পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়। তবে আলোচনায় এসে গ্রামীণফোনকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে তারা তাদের গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা দিতে পারছে।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, গত বুধবার গ্রামীণফোনকে এই মর্মে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে যে মানসম্মত সেবা (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) দিতে না পারার কারণে আর কোনো নতুন সিম বিক্রি করা যাবে না। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
বিটিআরসির গত মে মাসের হিসাব অনুসারে দেশে মোবাইল গ্রাহকসংখ্যা (সিম অনুসারে) প্রায় ১৮ কোটি ৪২ লাখ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের আট কোটি ৪৯ লাখ, রবির পাঁচ কোটি ৪২ লাখ, বাংলালিংকের তিন কোটি ৮২ লাখ এবং টেলিটকের ৬৭ লাখ।
সিম বিক্রিতে বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে গ্রামীণফোনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গ্রামীণফোন বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আইটিইউর সেবার মানদণ্ড অনুসরণ করে। পাশাপাশি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মানদণ্ড থেকেও এগিয়ে আছে গ্রামীণফোন। ধারাবাহিকভাবে নেটওয়ার্ক ও সেবার মানোন্নয়নে আমরা বিটিআরসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া নিলামেও গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ অনুমোদিত তরঙ্গ অধিগ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় অপ্রত্যাশিত এ চিঠি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছি। আমরা মনে করি, আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনাই হবে এ সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়। ’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, খুব দ্রুত এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। যত দিন পর্যন্ত মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত না হবে, তত দিন এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রামীণফোন আলোচনার কথা বলছে। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসির অবস্থান জানতে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র গতকাল বলেন, গ্রামীণফোন ও বিটিআরসি পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়। আলোচনা করতে বাধা নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি এই কারণে যে বহুবার বলার পরও তারা তাদের সেবার মান উন্নত করতে পারছে না। তারা গ্রাহক বাড়াতে যতটা আগ্রহী, গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে সেভাবে আগ্রহী না। এখন তারা যদি আলোচনা আসে তাদের বলতে হবে যে আর কোনো সমস্যা নেই, সেবার মান উন্নত হয়েছে। যত দিন তারা গ্রাহক সেবার মান উন্নত না করতে পারবে তত দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকতে পারে। ’
প্রসঙ্গত, বিটিআরসির অনেক আগে থেকেই মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান যাচাইয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছে। সেসব পরীক্ষার কিছু ফলও প্রকাশ করেছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তাতে কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের সেবা সন্তোষজনক বলে প্রমাণ হয়নি। সম্প্রতি রংপুরে দেশের চার মোবাইল অপারেটরের সেবার মান পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায় চার মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে তিনটিরই নির্ধারিত গতির ইন্টারনেট সেবা নেই।