এরই মধ্যে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া আলাদা দুটি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগর দ্বিচক্র–আইওডি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর প্রভাবে ভারত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি উষ্ণ রেখা তৈরি হয়েছে। যে কারণে মৌসুমি বায়ুর অক্ষরেখা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়ে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। বর্ষায় সাধারণত ওই অঞ্চলজুড়ে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকে আর জুন–জুলাই ও আগস্টজুড়ে টানা বৃষ্টি ঝরায়। বর্তমানে মৌসুমি বায়ুটি ভারতের গুজরাট ও পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া, করাচিসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ভারী বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে পাকিস্তানে শুধু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ুর অক্ষরেখা পাকিস্তান ও ভারতের গুজরাটে অবস্থান করায় সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। আর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মেঘ–বৃষ্টি না থাকায় রোদের কিরণ সরাসরি পড়ছে। যে কারণে গরমের অনুভূতি বেশি থাকছে। আগামী দু–তিন দিনের মধ্যে মেঘ বেড়ে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। তবে জুলাইয়ের শেষে ও আগস্টের শুরুতে বৃষ্টি বেড়ে গরমের অনুভূতি কমতে পারে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ডব্লিউএমওসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থাগুলো অবশ্য গত মার্চেই এ বছর উষ্ণতা বেশি থাকার পূর্বাভাস দিয়েছিল। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকেও বলা হয়েছিল, চলতি জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি কম হতে পারে। আর মাসের শেষের দিকে বন্যার আশঙ্কা আছে।
এ ব্যাপারে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মাসের শেষের দিক ছাড়া আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। জুলাইয়ের শেষে বা আগস্টের শুরুতে এক দফা বন্যার আশঙ্কা আছে। বাকি সময়জুড়ে একই ধরনের গরমের অনুভূতি থাকার সম্ভাবনা বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ১৫ জুলাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপপ্রবাহের একটি মাত্রচিত্র প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ১৫ জুলাই দুপুরে স্পেনের সেভেলি শহরের তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; ইরানের আহভাজ শহরের তাপমাত্রা উঠেছে ৪৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং চীনের সাংহাই শহরের তাপমাত্রা উঠেছে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ বড় শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।
অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে গত শুক্রবার ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, ওডিশা, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড় ও অন্ধ্র প্রদেশের বেশির ভাগ শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।
জানতে চাইলে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের উত্তপ্ত অবস্থা থেকে আপাতত পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। এ ধরনের আবহাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে পানি ও স্যালাইন খেতে হবে। বিরত থাকতে হবে রঙিন পোশাক পরা থেকে। সুতি কাপড়ের পোশাক পরা ভালো।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল শনিবার দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল নীলফামারীর সৈয়দপুরে—৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বেশির ভাগ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, টাঙ্গাইল, চুয়াডাঙ্গা ও সিলেট জেলা এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আজ রোববারও বয়ে যেতে পারে।