দেশে ডলারসংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে জ্বালানি আমদানি। এ সময়ে গ্যাস সরবরাহের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার প্রকল্প। এই গ্যাসলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে গাজীপুরের টিবিএস ধনুয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে ময়মনসিংহ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এ জন্য ‘ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধুনুয়া হতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হচ্ছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই প্রকল্প নেওয়া কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদনের উঠছে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে উৎপাদিত ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। ফলে গ্রিড থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ’
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৮৪.৭৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ধনুয়া হতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং এইচডিডি পদ্ধতিতে নদী ক্রসিং স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ইপিসি ভিত্তিতে টাউন বর্ডার স্টেশন ও স্কাডা সিস্টেম ও সিপি সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় সিস্টেম লস হ্রাস করে একটি দক্ষ ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন কাঠামো তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুেসবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান আমরা যে পরিস্থিতে আছি এটি হচ্ছে জরুরিভিত্তিক পরিস্থিতি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হলে আজকে আমাদের এ অবস্থা দেখতে হতো না। যে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে সেটি মূলত গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্প। গাজীপুরের ধনুয়া থেকে গ্যাস পাঠানো হবে ময়মনসিংহ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যেখান থেকে গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে পাঠানো হবে সেখানে পর্যাপ্ত গ্যাস আছে কি না। গ্যাস যদি না-ই থাকে তাহলে গ্যাসলাইনের প্রকল্প নিয়ে কী লাভ। আমরা তো একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এ সময় এমন প্রকল্প কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ভাববার বিষয়। ’
আরো যে প্রকল্পগুলো একনেকে : আজ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একনেকে অনুমোদনের জন্য উঠছে তিন প্রকল্প। সেগুলো হলো চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের (এন-১০৬) হাটহাজারী হতে রাউজান পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট (লাইন-৬), নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় ইটখোলা মটখোরা কটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া থেকে রায়পুরা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আওতায় ইলেকট্রনিক ডাটাসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি (ইপিসিবিসিএসপি) শীর্ষক প্রকল্প, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় খাগড়াছড়ি শহর ও শহরসংলগ্ন অবকাঠামো নদীভাঙন হতে সংরক্ষণ প্রকল্প এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় উপজেলা গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (দ্বিতীয় সংশোধনী)।