ব্যস্ত টরেন্টোর রাতের খোলা ময়দানে এক প্রবাসী যুবক আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। যুবকের নিঃসঙ্গতা কাটে আকশের নক্ষত্রের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে। হয়তো সেই নক্ষত্র-তারকা’র মধ্যে শূন্যতা লীন হয়ে যায় কিংবা হয় না। তারপরেও তাকিয়ে থাকা।
আকাশের বুকে স্মৃতি হয়ে ভেসে ওঠে ছেড়ে আসা প্রিয় ঢাকা শহর, বন্ধুদের আড্ডা, তুমুল উল্লাস। এখানে সেইসব নেই, আছে অসীম একাকীত্ব। এই একাকীত্বের সাথে দীর্ঘরাত কাটানো। ‘ এই একাকী জীবন ভাল লাগে না আমার বিষণ্ণ দিনের শেষে বিষণ্ণ রাতের শেষে। ‘ গুমোট হয়ে যাওয়া এই একাকী সময়ে মন চলে যায় যেখানে ব্যস্ত অতীত।
মনে পড়ে যায় কখনো পুরনো তোমাকে, প্রতিটি কষ্টমাখা দিনের ফাঁকে, হয়তো বদলে গেছ, হয়ে গেছ অচেনা তুমি, তবু ফিরে পেতে চায় তোমাকে আমি… ‘এই দূর পরবাসে, তারা গুনে আকাশে আকাশে’ একজন মানুষের গল্প নয় এটা। শত-সহস্র তরুণ-প্রবাসী যুবকের হাহাকার মেশানো এই গানের পেছনের গল্পটাও যেন কাকতালীয়।
এই গানের মতোই যেন গায়ক আশিকুজ্জামান টুলুর জীবন হয়ে গেল। কালের কণ্ঠকে টুলু বলেন, ‘গানটা আসিফ ইকবাল যখন আমার হাতে দেন তখন হঠাৎ করে কেন জানি আমার মনে হচ্ছিল আমার জীবনেও এই ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তখন ১৯৯৬ সাল। গানটা সুর করলাম, গাইলাম, জনপ্রিয় হয়ে গেল। এরপরে আমাকে ১৯৯৮ সালে কানাডায় চলে আসতে হয়। যেন গানটা আমার জীবনেরই গান হয়ে গেল। ‘ ঢাকার মোহাম্মদপুরে তুমুল আড্ডা দেওয়া যুবকটি হয়ে গেলেন পরবাসী।
বাংলাদেশের অজস্র জনপ্রিয় গানের জন্মদাতা ‘আর্ক’ ব্যান্ডের জন্ম হয় আশিকুজ্জামান টুলুর হাতে। ১৯৯৩ সালে এই ব্যান্ডে যোগ দেন জনপ্রিয় গায়ক হাসান। হাসানকেও জনপ্রিয়তা এনে দেয় ‘আর্ক। ‘ যদিও হাসান আর্ক থেকে একসময় বেরিয়ে যান এবং আবার দীর্ঘ সময় পরে এসে আর্কে যোগ দেন।
এই দূর পরবাসে, তারা গুনে আকাশে আকাশে’ ঠিক আগের মতোই জনপ্রিয় আছে। এখনো প্রবাসীদের হেডফোনে দেশের জন্য ব্যাকুলতার সাথে এই গান বেজে যায়। অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এখনো এই গান একাকী যুবককে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
‘এই দূর পরবাসে’ গানের স্রস্টা আশিকুজ্জামান টুলু প্রবাসে চলে গেলেও এখনও গান থেকে দূরে সরে যান নি। সর্বশেষ তার ইউটিউব চ্যানেল ‘The Raga Sutra’ তে আপলোড করেছিলেন তাও কয়েক বছর আগের কথা। গানের শিরোনাম ‘একটা মেয়ের কথা ভেবে। ‘ অসম্ভব সুন্দর এই গানটি হয়তো শুধু একবার শুনে মন ভরবে না। আশিকুজ্জামান টুলু প্রবাসে একজন বিজনেসম্যান হলেও এখনো প্রফেশনালি গানের সাথেই আছেন। সম্প্রতি হৃদি হকের পরিচালনায় একটি টাইটেল গানের কাজ শেষ করলেন তিনি।
আর্ক ব্যান্ড থেকে কি সরে গেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে টুলু জানান, আর্ক আমার ব্যান্ড। আর্ক থেকে কেন চলে যাব? দেশে ফিরলে তো আমি আর্কের সাথেই বাজাই, আর্কের সাথেই কাজ করি। অর্থাৎ আমরা খুঁজলে পেতে পারি সেই আর্কের টুলুকেই।